অনেক প্রশ্ন: তবুও ঐক্যফ্রন্ট ভাঙতে চায় না বিএনপি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক বছর পূর্তিতে এসে এর প্রধান শরিক বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তাদের এই জোট সর্বশেষ নির্বাচনে এবং পরের এক বছরে দেশটির রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বের ব্যাপারে কিছু ক্ষেত্রে অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং অনেক প্রশ্নও বিএনপিতে রয়েছে।
গত নির্বাচনের আগে এই জোট গঠনের সাথে জড়িত কামাল হোসেনের গণফোরামসহ অন্যদলের নেতারা বলেছেন, ব্যর্থতার অভিযোগ থাকলেও তাদের জোট অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি।
বিএনপি নেতারা অবশ্য বলেছেন, অনেক প্রশ্ন থাকলেও তারা ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দেবেন না। তারা উল্লেখ করেছেন, সরকারবিরোধী শক্তিগুলোকে এক মঞ্চে নেয়ার জন্যে বিএনপি এখনও ঐক্যফ্রন্টকেই টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী।
কেন বিএনপিতে এত প্রশ্ন?
এক বছর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের নির্বাচনী জোট গঠনের সময়ই বিএনপির তৃণমুলে এই জোট নিয়ে অবিশ্বাস, সন্দেহ ছিল।
নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বিএনপিতে সেই অবিশ্বাস ও সন্দেহ বেড়ে যায় এবং দলটির নেতাকর্মিদের মাঝে তৈরি হয় হতাশা।
এখনও বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেক প্রশ্ন তাড়া করছে ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে।
রাজশাহী এবং চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলার বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট গত নির্বাচনে চরমভাবে হেরে গিয়ে এই সংসদকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু এরপরও ঐক্যফ্রন্টের মাত্র যে সাতজন বিজয়ী হয়েছিলেন, তাদেরও সংসদে যাওয়া ঠেকাতে পারেনি।
বিএনপির তৃণমুলের নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, এক্যফ্রন্ট গত এক বছরে রাজনীতিতে কোন অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতেও ব্যর্থ হয়েছে।
তৃণমুলের পাশাপাশি দলটির মধ্যম সারির নেতারাও এখনও ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে একই ধারণা পোষণ করেন।
বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী এবং সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী বলছিলেন, এখনও ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে এগুনোর বিষয়ে তাদের প্রশ্ন রয়েছে।
"প্রত্যেকটা সচেতন মানুষ দেখেছে যে, এই ঐক্যফ্রন্ট দিয়ে আমাদের কতটা লাভ হয়েছে বা হয় নাই। এখন তারপরও তারা কারও সাথে কথা না বলে কাউকে জিজ্ঞেস না করে এই জোট নিয়ে কাজ করছে।"
"একটা মানুষ যখন ভুল করে তখন তার সংসার এবং সে সাফার করে। একজন রাজনীতিবিদ ভুল করলে তার দল এবং দেশ সাফার করে। এই ভুল করার কথা বলার স্পর্ধা যেমন আমার নাই, তেমনি আমি এটাও বলতে চাই যে আমরা ধাক্কা খাচ্ছি। কিন্তু কোনো সমাধানে আসতে পারছি না।"
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন,তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে থাকায় তার বিকল্প হিসেবে কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে বিএনপি এই জোট করেছিল।
কিন্তু মি. হোসেন নির্বাচন না করায় সেটি বিএনপির জন্য ছিল প্রথম হোঁচট বা ধাক্কা।
এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণাতেও বিএনপি তাদের নেত্রীর বিকল্প হিসেবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কামাল হোসেনকে মাঠে পায়নি।
সেজন্য এই জোট তাদের নেতৃত্ব সম্পর্কে মানুষকে আশ্বস্ত করতে পারেনি বা একটা বিশ্বাস তৈরি করতে পারেনি বলে বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন।
এসব বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বকে তাদের দলে বার বার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
এই জোট গঠনের সাথে জড়িত বিএনপির দু'জন সিনিয়র নেতা ড: খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ ভোটে পরাজয়ের পর ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকগুলোতে অংশ নেয়া বন্ধ করে দেন।
ঐক্যফ্রন্টের কারণে জামায়াতে ইসলামী সহ বিএনপির পুরোনো ২০ দলীয় জোট নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে।
বিএনপি কেন ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখতে চাইছে
বিএনপি এখনও সরকারকে একঘরে করার চেষ্টা নিয়ে এগুতে চাইছে। সেজন্য তারা ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, "নির্বাচনের সময় যে প্রত্যাশা নিয়ে জোট করা হয়েছে, জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কিন্তু এখনও ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। কারণ ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এখনও পূর্ণতা পায়নি।"
ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়
Image caption
ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট সোচ্চার হয়নি বলে বিএনপির অভিযোগ
নির্বাচনে পর গত এক বছরে বিএনপি তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলন চেয়েছিল ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে।
কিন্তু গণফোরামসহ অন্যদলগুলো এই ইস্যুতে সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। এনিয়ে দলটির সব পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেই ক্ষোভ রয়েছে ।
তবে শেষপর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্ব রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেই ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার কথা বলছে।
এই জোট গঠনের অন্যতম একজন নেতা এবং নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না বলছিলেন, তাদের জোট অপ্রাসঙ্গিক হয়েছে এমন সংকট এখনো হয়নি।
"এমন সংকটে আমরা পড়িনি যে, এটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। তবে এটা হতেই পারে যে, মানুষের মধ্যে যে উচ্চাশা বা প্রত্যাশা ছিল বা সমর্থন ছিল, সেই তুলনায় আমরা কিছুই করতে পারিনি। সেজন্য একটা হতাশা আছে এবং অনেকে সমালোচনাও করেন। কিন্তু ঐক্যের বিরোধীতা করে তারা সেটা করছেন না।"
ঐক্যফ্রন্টে অন্য শরিক দলগুলোর নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের "কঠোর শাসনের" মুখে ঐকফ্রন্ট টিকিয়ে রাখা ছাড়া বিএনপির কাছে বিকল্প কিছু নেই।