৩৪ বছর পর সল্টলেকে আজ মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বাংলাদেশের ফুটবলের সেই জৌলুস আর নেই। পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে খুঁজছে বাংলাদেশের ফুটবল। কোনো দলের বিপক্ষে ভালো খেললে স্বপ্ন দেখছে। আর খারাপ খেললে গেল গেল রব উঠছে। এই দোলাচলে দুলতে দুলতে বাংলাদেশের ফুটবল চলছে সম্মুখপানে। এর মধ্যে নিজেদের প্রমাণ করে বিশ^কাপের বাছাইপর্বের প্রথম ধাপ পেরোয় তারা। দ্বিতীয় ধাপে নাম লেখায়। যেটা আবার ২০২৩ এশিয়ান কাপেরও বাছাইপর্ব।
এই বাছাইপর্বে ‘ই’ গ্রুপে বাংলাদেশ পেয়েছে কাতার, ওমান, আফগানিস্তান ও ভারতকে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বাছাইপর্বের দুটি ম্যাচ খেলেছে। প্রথমটি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। পরেরটি ২০২২ বিশ^কাপের আয়োজক কাতারের বিপক্ষে। দুটি ম্যাচেই ভালো পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ হার মেনেছে যথাক্রমে ১-০ ও ২-০ গোলে। অবশ্য ভারতও দুটি ম্যাচ খেলেছে। তারা ওমানের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে ও কাতারের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে। যা তাদের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা সাফল্য। বাছাইপর্বে টিকে থাকা ও পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন টিকিতে রাখতে বাংলাদেশ এবং ভারতের জয়ের বিকল্প নেই। এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় কলকাতার বিখ্যাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ভারত। যা ভারতের স্টার স্পোর্টস ও বাংলাদেশের বাংলা টিভি সরাসরি সম্প্রচার করবে। সবশেষ ১৯৮৫ সালে সল্টলেকে ভারতের বিপক্ষে বিশ^কাপ বাছাইপর্ব খেলেছিল বাংলাদেশ। ৩৪ বছর পর আবার খেলতে যাচ্ছে আজ।
গেল কয়েক বছরে ভারতের ফুটবল এগিয়েছে বেশ। ভারতের বড় বড় কোম্পানিগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ভারতের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে। তাদের দেশে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) লিগ হচ্ছে। সেটা অবশ্য ভারতের ফুটবলে প্রভাব ফেলেছে। র্যাঙ্কিংয়ে তারা এগিয়েছে। তাদের বর্তমান র্যাঙ্কিং ১০৪। বাংলাদেশের ১৮৭। এতেই অবশ্য স্পষ্ট দুই দেশের ব্যবধান। ভারত যেখানে ফেভারিটের তকমা পাচ্ছে। এটা অবশ্য ভারতের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগোর স্টিমাকের কাছে মোটেই গুরুত্ব পাচ্ছে না। তিনি বলেছেন, ‘আসলে কোনো ম্যাচে ফেভারিট হওয়াটা কোনো কাজে লাগে না। যেটা আমরা কাতারের বিপক্ষে প্রমাণ করেছি। এটা আসলে ১১ জন বনাম ১১ জনের খেলা। প্রত্যেক ম্যাচেই ফেভারিট এবং আন্ডারডগ থাকে। তার মানে এই নয় যে ফেভারিট দলই জিতবে। এটা আসলে দলগত প্রচেষ্টার ব্যাপার।’
পাশাপাশি বাংলাদেশের তিনি প্রশংসাও করেছেন, ‘বাংলাদেশ কাতারের বিপক্ষে খুবই ভালো খেলেছে। যদিও তারা ম্যাচটি ২-০ গোলে হেরেছে। কিন্তু অনেক সুযোগ তৈরি করেছে। ম্যাচটি বাংলাদেশের জেতা উচিত ছিল। তারা এখানে হারার জন্য আসেনি। তারাও এখানে জেতার জন্য এসেছে। তারা গেল ১৩ মাসের অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমাদের মতো তাদের দলেও বেশ কিছু ট্যালেন্টেড তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে। বাংলাদেশকে সম্মান করেই এই ম্যাচে মাঠে নামা যাক। যদিও আমরা চেষ্টা করব পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার। যেটা আমাদের জন্য জরুরি।’
যখন গ্রুপিং হয় তখন ভারত তাদের টার্গেটে রেখেছিল বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানকে। কাতার ও ওমানের বিপক্ষে তারা জয় পায়নি। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলবে তারা। জয় ভিন্ন অন্যকিছু চিন্তু করছেন না ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী, ‘আমাদের মূল লড়াইটা এখান থেকে শুরু। প্রথম দুই ম্যাচে আমরা জয় পাইনি। আমরা চেষ্টা করব ৩ পয়েন্ট পাওয়ার।’
অবশ্য সুনীল ছেত্রীকে নজরে রাখবে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের বিপক্ষে বরাবরই ভালো খেলেন তিনি। তবে সুনীল জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ যদি আমাকে মার্ক করে খেলে সেটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। কারণ, আমার পেছনে যদি ৪ জন থাকে তাহলে খেলাটা হবে ১০ জন বনাম ৬ জনের। সেক্ষেত্রে আমরা সুবিধা পাব। কালকে (আজ) তাহলে বাংলাদেশ দেখবে যে সুনীল ছাড়াও ভারত দলে আরো অনেক খেলোয়াড় আছে। যারা বর্তমানে সুনীলের চেয়েও ভালো করছে। আর কাতারের বিপক্ষের ম্যাচের পর প্রমাণিত হয়েছে ভালো পারফরম্যান্স করতে ভারতের আমাকে প্রয়োজন নেই। আমি দলের ২৩জন সদস্যের একজন। হয়তো একটু বেশি ভাগ্যবান এবং একটু বেশি অভিজ্ঞ। আমরা দল হিসেবে ভালো খেলব এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া মনে করছেন যারা মিডফিল্ডে ভালো করবে তারাই আজ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে। আর সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্কোর করার চেষ্টা করবেন তিনি। বাংলাদেশ কোনো চাপ নিচ্ছে না। জামাল মনে করছেন পুরো চাপ ভারতের উপর থাকবে, ‘আসলে কালকের ম্যাচে (আজকের) যারা মিডফিল্ডে ভালো করবে, তারা ম্যাচে ভালো করবে। কারণ, মিডফিল্ড সুযোগ তৈরি করে দেয়। গোল করতে হলে আমাদের সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা যদি গোল করতে না পারি তাহলে ভারত গোল করবে। কালকের (আজকের) ম্যাচের আমাদের জন্য একটি গোল করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি একটি গোল হলে আরো গোলের সুযোগ তৈরি হবে। এটা আসলে কনফিডেন্টের বিষয়। ভারত অবশ্যই শক্তিশালী দল। তাদের ঘরের মাঠে খেলা। অনেক দর্শক থাকবে। আমি আমার সতীর্থদের বলেছি এমন সুযোগ বার বার আসবে না। ম্যাচটি উপভোগ করো। আমরা কোনো চাপ নিচ্ছি না। চাপ থাকবে ভারতের উপর। তারা ভালো না খেললে দর্শকরা তাদের বিরুদ্ধে চলে যাবে।’
বাংলাদেশের কোচ ভারতকে সমীহ করেছেন। জানিয়েছেন ঘরের মাঠে ম্যাচ হলে তিনিও জিততে চাইতেন। কিন্তু কাতারের বিপক্ষের ম্যাচের আত্মবিশ^াস নিয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলবে তার দল, ‘কাতারের বিপক্ষের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট। আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। খেলোয়াড়র সবাই ফিট আছে। আমরা এই ম্যাচটি খেলতে মুখিয়ে আছি। এই মাঠে অনেক দর্শক হবে। আমি যদি খেলোয়াড় হতাম তাহলে এতো দর্শকের সামনে খেলার ইচ্ছা পোষণ করতাম। আমি আমার খেলোয়াড়দের বলেছি এতো দর্শকের সামনে তোমরা হয়তো আর খেলার সুযোগ পাবে না। সুতরাং এটাকে কাজে লাগাও। আমি তাদের আত্মবিশ^াসের সঙ্গে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে বলেছি। ভারতের ঘরের মাঠে খেলা। আমারও যদি ঘরের মাঠে খেলা হত আমি জিততে চাইতাম। সুতরাং ভারত কিছুটা সুবিধা পাবে। তবে আমরা কাতারের বিপক্ষের ম্যাচের আত্মবিশ^াস নিয়ে খেলব।’
১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ২৮টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ভারত জিতেছে ১৫টিতে। বাংলাদেশ জিতেছে ৩টিতে। ড্র হয়েছে ১০টি ম্যাচ। বাংলাদেশের জালে ভারত ৩৮ বার বল জড়িয়েছে। অন্যদিকে ভারতের জালে বাংলাদেশ ১৮ বার বল জড়িয়েছে। যদিও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ জয়টি এসেছে ১৬ বছর আগে, ২০০৩ সালে। ৩৪ বছর পর সল্টলেকে খেলতে নেমে বাংলাদেশকে কি পারবে ভারতের বিপক্ষে তাদের চতুর্থ জয় তুলে নিতে? সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে রাত পর্যন্ত।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ১৫,২০১৯)