‘যুবলীগের’ কর্তৃত্ব নিতে নেতাদের লড়াই
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আগামী ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। এই কংগ্রেসের মাধ্যমে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। সম্প্রতি শুদ্ধি অভিযানে লন্ডভন্ড বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগ নামক সংগঠনটি এখন কালিমালিপ্ত হয়ে গেছে। সংগঠটি এখন সমালোচনায় বিদ্ধ। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কর্তৃত্বের লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
যদিও এতদিন ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার একক নির্দেশে এবং নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। অন্যান্য নেতাদের এখানে নাক গলানোর সুযোগ ছিল কম। অবশ্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগে সবসময়েই শেখ ফজলুল হক মনি পরিবারের একটা প্রভাব ছিল। শেখ সেলিমের একটা প্রভাববলয় যুবলীগে সবসময় ছিল। এখন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের প্রভাববলয় ভেঙে ফেলা হবে।
বর্তমান যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী শেখ সেলিমের বোনের জামাই। এছাড়া শেখ সেলিমের ছোটভাই শেখ মারুফ যুবলীগের অন্যতম প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য। শুধু ওমর ফারুক চৌধুরী বা শেখ মারুফ নয়, যুবলীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অধিকাংশ নেতাই শেখ সেলিমের আশীর্বাদপুষ্ট, শেখ সেলিমের মাধ্যমেই তাদের যুবলীগের রাজনীতির সূচনা। এ কারণে শেখ সেলিমের প্রভাব যুবলীগে সর্বজনবিদিত।
অনেকেই মনে করছেন, এবারের যুবলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে শেখ সেলিমের প্রভাববলয় ভেঙে ফেলে একটা নতুন যুবলীগ তৈরি করা হবে। কিন্তু শেখ সেলিমের প্রভাববলয় ভেঙে ফেলা কি খুব সহজ হবে, যেখানে সারাদেশে শেখ সেলিমের অনুগামীদের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে?
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার যুবলীগকে কোনো সিন্ডিকেটে রাখবেন না। কিন্তু যুবলীগের সাম্প্রতিক বিতর্কের পরে অনেকেই যুবলীগকে অনেকেই নিজের পকেটস্থ সংগঠন করে তোলা বা যুবলীগের নতুন সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকও যুবলীগের বর্তমান কমিটিতে তার প্রভাববলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। তিনি যুবলীগের অনেক সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং আসন্ন কংগ্রেসের নেতৃত্ব নির্ধারণের জন্য বেশ দৌড়ঝাপ করছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। তার বাসায় বিভিন্ন যুবলীগের নেতৃবৃন্দ বৈঠক করছেন বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর কবির নানকের পছন্দের প্রার্থী হলেন শহীদ সেরনিয়াবাত। তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের খালাতো ভাই। এছাড়া জাহাঙ্গীর কবির নানক তার প্রভাববলয় খাটিয়ে আরও কাউকে কাউকে যুবলীগে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওবায়দুল মানেই ছিল ছাত্রলীগ। একটা দীর্ঘ সময় তিনি ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। যুবলীগের ব্যাপারে তিনি কখনোই নাক গলাতেন না। কিন্তু এবার যুবলীগের ব্যাপারেও তার উৎসাহ দৃশ্যমান হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। যুবলীগের কমিটি এবং সাম্প্রতিক যুবলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ওবায়দুল কাদেরও দলের অনেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এবার ওবায়দুল কাদেরও এবার যুবলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে একটি প্রভাববলয় তৈরির চেষ্টা করবেন। তারও কিছু পছন্দের মানুষ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদেরা মনে করছেন, যুবলীগের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে শেখ হাসিনা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। যুবলীগকে তিনি আর কারো পকেটস্থ হতে দেবেন না, যুবলীগকে তিনি যুব সমাজের মনন এবং মেধা চর্চার একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এজন্য তিনি প্রয়োজনে শূন্য থেকে শুরু করার নীতিও তিনি গ্রহণ করতে পারেন। তাই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে সিন্ডিকেট কাজ করছে, সেই সিন্ডিকেট কতটা সফল হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ১৬,২০১৯)