রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের ‘এমপিটি’ সিমের ছড়াছড়ি
কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল। সম্প্রতি ক্যাম্পগুলোতে ফোরজি ও থ্রিজি সেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এ কারণে মিয়ানমারের মোবাইল অপারেটর ‘এমপিটি’র সিমের প্রতি ঝুঁকছে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা।
মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আসা এসব সিম এখন দেদার বিক্রি হচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। এই সুযোগে মিয়ানমারের ওই মোবাইল কোম্পানি নেটওয়ার্কের শক্তি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তের ওই অংশে। ফলে বেশিরভাগ ক্যাম্পই এমপিটি’র নেটওয়ার্ক পাচ্ছে।
সম্প্রতি উখিয়া ও টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কয়েকটি এমপিটি সিমের চালানসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে এসব সিম নিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশের সময় তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটককৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, রাখাইনে এমপিটি সিমের দাম খুব কম। এছাড়া সীমান্তের দুই পাড়েই এর নেটওয়ার্ক আছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও এই কোম্পানির নেটওয়ার্ক রয়েছে। সেজন্যই রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই সিমের চাহিদা বাড়ছে। এজন্য তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চোরাইপথে নিয়ে আসছে এমপিটি সিম।
গত ২ সেপ্টেম্বর অপারেটরদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ‘বিটিআরসি’ বিকাল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ করে দেয়। একইভাবে দিনের বেলায়ও সারাদিন মোবাইল নেটওয়ার্ক অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে উখিয়া ও টেকনাফে বসবাসরত স্থানীয় বাংলাদেশিরা বেকায়দায় পড়লেও রোহিঙ্গারা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। মিয়ানমারের মোবাইল অপারেটর এমটিপি সিম ব্যবহারে তাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। ওই সিম ব্যবহার করে রোহিঙ্গা অপরাধীরাও যে যার মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
এমপিটি সিমের চালানসহ আটক ব্যক্তিরা
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউনুছ আরমান জানান, ‘চোরাইপথে সীমান্ত পার হয়ে এমপিটি সিম আসছে ক্যাম্পগুলোতে। তবে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমপিটি মোবাইলের নেটওয়ার্ক দুর্বল। কিন্তু উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তর নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনও ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।’
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা লালু মাঝি বলেন, ‘ক্যাম্পে ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে এমপিটি সিম পাওয়া যাচ্ছে। ক্যাম্পে অবস্থানরত মোবাইলের দোকানগুলোতে হাত বাড়ালেই এমপিটি সিম পাওয়া যায়। এই সিম বাংলাদেশি মোবাইল কোম্পানিগুলোর সিম থেকেও সহজলভ্য। এছাড়া এমপিটি’র একটি সিম কিনে মোবাইলে চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট ও মিনিট বোনাস হিসেবে পাওয়া যায়। এজন্য মিয়ানমারের সিমের প্রতি ঝুঁকছে রোহিঙ্গারা।’
উখিয়ার টিঅ্যান্ডটি টাওয়ার সংলগ্ন ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি, বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানি থ্রিজি ও ফোরজি বন্ধ করে দেওয়ার খবরে রাখাইনে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি তাদের নেটওয়ার্কের শক্তি বাড়িয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফের অধিকাংশ এলাকায় যাতে এমপিটি সিমের নেটওয়ার্ক মেলে সেজন্য ওই কোম্পানি কাজ করে চলেছে। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অনেক রোহিঙ্গাকে এমপিটি সিম ব্যবহার করতে দেখেছি। অবশ্য আমি এখনও বাংলাদেশি মোবাইল সিম ব্যবহার করছি। রাতে একটু সমস্যা হলেও দিনের বেলায় থ্রিজি নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে।’
উখিয়ার থাইংখালী শফিউল্লাহকাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবুল কালাম মাঝি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমপিটি সিমের চাহিদা বেড়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে অসংখ্য সিম মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের খবর রয়েছে। এসব সিম রাখাইনে বাংলাদেশি টাকায় ৩০-৪০ টাকায় কিনে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিক্রি করছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। ওই সিমগুলোতে বোনাসও দেওয়া থাকে। বোনাস মিনিট ও ইন্টারনেট শেষ হয়ে গেলে আবার টাকা রিচার্জের ব্যবস্থাও রয়েছে।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ১৭,২০১৯)