সীমান্তে গোলাগুলি, বিএসএফ সদস্য নিহতের দাবি
রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে বিজিবির গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে।
পদ্মায় ইলিশ শিকারের সময় ভারতীয় এক জেলেকে আটক করাকে কেন্দ্র করে ওই গোলাগুলিতে বিএসএফের এক সদস্য নিহত হয়েছে বলে বিজিবির কাছে দাবি করেছে তারা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চারঘাট উপজেলা সদরের বিপরীতে পদ্মা ও তার শাখা বড়াল নদের মোহনা শাহরিয়ার খাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে রাতে বিজিবির রাজশাহীর-১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করা হয়। সেখানে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ জানান, ঘটনার পর বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজিবির ১ ব্যাটালিয়ন ও ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেখানে ১১৭ বিএসএফ কমান্ড্যান্ট এএস মেহতা দাবি করেছেন, তাদের একজন সদস্য নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। তবে ঘটনার সময় বিজিবি ফাঁকা গুলি করেছে বলে উল্লেখ করেছেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে জিয়াউদ্দিন মাহমুদ জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযানে যায় বিজিবি। এ সময় মাছ ধরারত তিন জেলেকে আটকের চেষ্টা করা হলে দুজন পালিয়ে যায়। তবে একজনকে জালসহ আটক করে নদীর এপারে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি নিশ্চিত হয়, আটক জেলে ভারতের নাগরিক।
কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পিড বোট নিয়ে অনুমতি ছাড়া শূন্য লাইন অতিক্রম করে। তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশের ৬০০ থেকে ৬৫০ গজ ভেতরে নদীর এপারে বিজিবি টহল দলের কাছে আসে এবং আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলে।
বিজিবি টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতের নাগরিককে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে তাদের জানায়।
কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা তাদের নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে নিয়ে মারধর করার পর ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে আনুমানিক ৬ থেকে ৮ রাউন্ড গুলি করে। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবির টহল দল ফাঁকা গুলি করে। তখন বিএসএফ সদস্যরা গুলি করতে করতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এদিকে বিএসএফের বিবৃতির বরাত দিয়ে ভারতের এনডিটিভি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্তে ওই ঘটনায় বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিং নিহত হয়েছেন। আরও একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওই ঘটনার পর বিএসএফ প্রধান ভিকে জহরি ফোনে বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিজিবি প্রধান এ বিষয়ে তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিজিবির অধিনায়ক ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ জানান, পতাকা বৈঠকে আটক ভারতীয় জেলেকে ফেরত দেয়া হয়নি। তাকে চারঘাট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।
তিনি জানান, পতাকা বৈঠকে উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে আরো আলোচনার জন্য সীমান্তে দ্রুত আরেকটি পতাকা বৈঠক করার বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফ সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে পতাকা বৈঠক শেষ হয়েছে বলেও জানান বিজিবির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ১৮,২০১৯)