রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতে ভ্যাট মওকুফ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কিংবা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের প্রাকৃতিক গ্যাস, পানি ও বিদুৎ বিলে কোনো মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) দিতে হবে না। তবে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পেতে হলে পূরণ করতে হবে ছয়টি শর্ত।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে গত ১৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যা গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মূসক আইন ও বিধি বিভাগের দ্বিতীয় সচিব মো. তারেক হাসানের সই করা আদেশে বলা হয়েছে, ভ্যাট নিবন্ধিত শতভাগ সরাসরি রপ্তানিকারক, শতভাগ প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও ইপিজেডে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান মূসক/ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাবে। এ সুবিধা পেতে হলে নিম্নরূপ শর্ত প্রতিপালন করতে হবে। এসব শর্ত হলো-
কারখানা বা উৎপাদনস্থলে রপ্তানিকাজে ব্যবহৃত মিটার নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারের কাছে আবেদন করতে হবে।
যে মাসের বিল থেকে আলোচ্য অব্যাহতি সুবিধা গ্রহণ করতে আগ্রহী, সে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
আবেদনপ্রাপ্তির পর কমিশনার সরেজমিনে রপ্তানি কার্যক্রম পরীক্ষা করে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর ও দাখিলপত্র যাচাই করে সন্তুষ্ট হলে অব্যাহতি কার্যকর হওয়ার আদেশ জারি করবেন। যে মাসের বিলে অব্যাহতি সুবিধা প্রযোজ্য হবে সেই মাসের নাম আদেশে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
যেক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিল ইস্যু না করে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের নামে বিল ইস্যু করে, সেক্ষেত্রে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ সব প্রতিষ্ঠানের সেবার ব্যবহার ও বিলের পরিমাণ উল্লেখ করে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে। কমিশনার উক্ত প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সন্তোষজনক হলে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হবে। তবে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো অফিসে ব্যবহার করা বিলের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি হবে না।
কোনো ক্ষেত্রেই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কারখানা বা উৎপাদনস্থল ছাড়া অন্য কোনো অফিসে ব্যবহৃত সেবার ভ্যাট অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে না।
আদেশে প্রদত্ত শর্তে আরো বলা হয়, একই মিটার যদি একাধিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে, যার প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি পণ্য উৎপাদান করে না, তাহলে বিদ্যুৎ বিলের ওপর প্রযোজ্য মূসক পরিশোধ করতে হবে অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে না।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ এ জাতীয় পরিসেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পায়। কিন্তু এ সুবিধার আড়ালে অনেক কারখানা নানাভাবে এর অপব্যবহার করছে বলে অভিযোগ আছে। বিশেষত রপ্তানির সঙ্গে জড়িত নয়, এমন প্রতিষ্ঠান কিংবা অফিস বা বাসা-বাড়িতেও একই সংযোগের আওতায় পরিসেবা ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণেই শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। যারা শর্ত মানবে কেবল তারাই এ সুবিধা পাবে।
এনবিআর কর্তৃক আদেশে আরো বলা হয়, বিভাগীয় কর্মকর্তা, অব্যাহতি সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করবেন। বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বা অন্য কোনো বিষয়ে অসামঞ্জস্য পাওয়া গেলে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও শুনানি করা হবে। বিভাগীয় কর্মকর্তা কমিশনারের কাছে অব্যাহতি সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করলে কমিশনার শুনানি গ্রহণ করে তা বাতিলও করতে পারবেন।
বন্দর, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স, ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং সংস্থা, বীমা কোম্পানি ও শিপিং এজেন্ট সেবার ওপর প্রযোজ্য মূসক অব্যাহতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আমদানি বা শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরীক্ষান্তে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কমিশনার মূসক অব্যাহতির সুবিধা প্রদানকরবেন।
মূসক অব্যাহতির সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান প্রতি কর মেয়াদের মূসক দাখিলপত্রের সঙ্গে নির্ধারিত ছকে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে স্থানীয় ভ্যাট পাঠাবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ১৯,২০১৯)