নুসরাতের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান মা
ফেনী প্রতিনিধি: ‘‘ফাঁসি দিলে তো বিনা কষ্টে মারা যাবে আমার মেয়ের হত্যাকারীরা। তাদের যেন পুড়িয়ে মারা হয়, যাতে তারা বোঝে আমার মেয়ে কত কষ্ট পেয়েছে। আমি চাই, হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’’
আজ বৃহস্পতিবার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার আগে এমন আকুতি ঝরলো মা শিরিন আখতারের কণ্ঠে। সোনাগাজী পৌর শহরের বাড়িতে তিনি এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
গত ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা।
৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আট জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে বলা হয় মামলায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়। কয়েক দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নুসরাতের মা বলেন, ‘‘আমি আমার কলিজার টুকরা মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এমন শাস্তি হোক, যেন পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার মেয়ে যে কষ্ট করেছে, এক টুকরো অক্ষত মাংস নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেনি, সেই যন্ত্রণা যেন খুনিদের দেয়া হয়।’’
নুসরাত হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও তদন্তের পর গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেদিন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি বিচারক ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন।
১৬ আসামি হলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মহিউদ্দিন শাকিল এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন।
মামলায় ২১ জন গ্রেপ্তার হলেও তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অন্য পাঁচ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
অন্যদিকে, অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিষয়ে নুসরাতের অভিযোগ গ্রহণের সময় তা ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনেরও বিচার চলছে।
বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ২৪,২০১৯)