শেয়ারবাজারের আইপিও রিভিউ টিমকে ঘিরে শুরুতেই সন্দেহ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শুরুতেই সন্দেহের তীর শেয়ারবাজারে স্বচ্ছ ও ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য গঠিত‘‘আইপিও রিভিউ টিম’কে নিয়ে। টিমের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা কম রাখায় এই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গঠন করা ‘ আইপিও রিভিউ টিম’কে বিনিয়োগকারীরা ধান্দার নতুন পথ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ সন্দেহ প্রকাশ করা হলে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রেসক্লাবের ওই সন্মেলন থেকে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ডিএসই যে টিম গঠন করেছে তাতে একজন বিচারপতি ও একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা রাখা হয়েছে। এই দুজনের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু তাদের সামনে রেখে ডিএসইর অসাধুরা ধান্দার নতুন ফাঁদ পাতবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই টিম দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা হবে না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ডিএসইর অসাধু কর্মকর্তারা যোগসজশ করে বাজারে দুর্বল কোম্পানি আনছে। আজ বাজারের যে দুরবস্থা তার জন্য সব থেকে বেশি দায়ী বিএসইসি।’
‘আমাদের সন্দেহ এই টিম গঠন করে ডিএসইর পরিচালকদের একটি অংশ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাণিজ্যে মেতে উঠবে। সেই সঙ্গে অবৈধ প্লেসমেন্ট সুবিধা নেবে। ডিএসইর টিমের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই।’
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিশেষজ্ঞ প্যানেলে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত জরুরি। নইলে যে উদ্দেশ্যে ‘আইপিও রিভিউ টিম’তা ব্যাহত হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের(ডিএসই) পরিচালক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন দ্য রিপোর্টকে বলেছেন কোনো কোম্পানির প্রসপেক্টাস জমা হওয়ার পর আমাদের ১৫ সদস্যের এক্সপার্ট টিম তার ব্যালান্স শিট পর্যবেক্ষণ করবে। ১৫ সদস্যের এক্সপার্ট টিম অনেক শক্তিশালী হবে। দেশের নামকরা অডিট ফার্মের বিশেষজ্ঞরা অডিটরা থাকবেন। প্রসপেক্টাস ও আর্থিক প্রতিবেদনের কোনো ধরনের ত্রুটি বা দুর্বলতা দেখা দিলে আমরা বিএসইসির কাছে জানাবো। কমিশন চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ত্রুটিপূর্ণ কোনো কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেবে না।
এখানে প্লেসমেন্ট বানিজ্যের সুযোগ কম। আর আইপিও রিভিউ টিমকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারা রয়েছে দেখলেই বোঝা যাবে।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের(ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমাদের আইপিও রিভিউ টিমকে সহযোগিতা করার জন্য তিনজন সহযোগী এক্সপার্ট থাকবেন। মুল এক্সপার্ট প্যানেলে ১৫ জন বিশেষজ্ঞ ফিনিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট থাকবেন। আমাদের টিম প্রয়োজনে কোনো কোম্পানিকে ফিজিক্যালি ভেরিফিকেশন করবে।আমরা ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে ইস্যুায়ার ,ইস্যু ম্যানেজার, অডিটরকে ধরা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, যত কমিটি তত জটিলতা। এত কমিটির দরকার নেই। আর যারা খুব বেশী বোঝেন না তাদের নিয়ে আইপিও রিভিও টিম করা হয়েছে। তারা কি ধরণের এক্সাপার্ট প্যানেল গঠন করবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। এই রিভিও কমিটি তালিকা ভুক্তিকরণে আরো অস্বচ্ছতা ও অনিয়ম টেনে নিয়ে আসতে পারে বলে আশংঙ্কা করছি। অডিটরদের নিরিক্ষীত প্রতিবেদনের অডিটিং ও একাউন্টিং মানের প্রয়োগ জরুরী। এর যথাযথ প্রয়োগের জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের সক্ষমতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কএক্সচেঞ্জ কমিশনের পরামর্শে সোমবার (২৮ অক্টোবর) ৬ সদস্যের ‘আইপিও রিভিউ টিম গঠন করে ডিএসই। ডিএসইর দাবি এই টিম গঠনের ফলে আইপিওতে স্বচ্ছ ও ভালো কোম্পানি আসবে।
ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানকে প্রধান এবং লিস্টিং বিভাগের প্রধানকে সদস্য সচিব করে গঠন করা ডিএসইর আইপিও রিভিউ টিমে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে- ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারীকে।
ডিএসই জানিয়েছে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন করা কোম্পানির প্রসপেক্টাস পর্যালোচনার জন্য এ কমিটি কাজ করবে। এ জন্য বিভিন্ন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক বিশ্লেষক এমন ১০-১৫ জন বাছাই করে এক্সপার্ট প্যানেল করবে কমিটি। একটি কোম্পানির প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করতে এক্সপার্ট প্যানেলে থাকা বিভিন্ন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক বিশ্লেষকদের মধ্য থেকে কমপক্ষে দুইজন এবং সর্বোচ্চ তিনজন কাজ করবেন।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম /৩১ অক্টোবর, ২০১৯)