ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মাদক পরীক্ষা দিতে হবে
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ভবিষ্যতে গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশের সময় অথবা চাকরিরত অবস্থায় কারও বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের সন্দেহ হলেও তাকে ডোপ টেস্ট দিতে হবে।
টেস্ট ফলাফল পজেটিভ বা ইতিবাচক হলে গাড়ি চালকদের অর্থদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আর সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ‘ডোপ টেস্ট বিধিমালা-২০১৯’র প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এরপর এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সম্প্রতি খসড়াটির ওপর মতামত চেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির মাদক পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক বা পজেটিভ হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। এক্ষেত্রে আইনের ৩৬ (৪) ধারা অনুযায়ী, মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে আদালত মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিজস্ব অথবা পরিবারের ব্যয়ে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে পারবে। যদি ওই ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন তবে সর্বনিম্ন ৬ মাস ও সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হবে।
আইনের ৩৬(৫) ধারা অনুযায়ী, কেউ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জনসাধারণের শান্তি বিনষ্ট বা অসদাচরণ করলে কিংবা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালালে অনূর্ধ্ব ১ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হবে। আইনের ৩৬(৬) ধারা অনুযায়ী, সরকারি গাড়ির চালক গাড়ি ব্যবহারকারী অফিসারের অনুপস্থিতিতে মাদকদ্রব্য পরিবহনের সময় আটক হলে অপরাধ অনুযায়ী আইনানুগ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া ডোপ টেস্ট পজেটিভ হলে মাদক সেবনকারী ব্যক্তি সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। পাশাপাশি চাকরিরত অবস্থায় ডোপ টেস্ট পজেটিভ হলে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে।
যারা আদেশ দিতে পারবেন : বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, যারা ডোপটেস্ট করানোর আদেশ দিতে পারবেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার কাছে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি; যে কোনো আদালত; ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট; মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার; সির্ভিল সার্জন; রেজিস্টার্ড সরকারি চিকিৎসক; সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া চাকরিরত অবস্থায় মাদক সেবনের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ; গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএ; কর্মরত অবস্থায় গাড়ির চালকদের সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ডোপ টেস্ট করার আদেশ দিতে পারবে।
এসব কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো কর্তৃপক্ষ ডোপ টেস্টের আদেশ দেয়ার পরও যদি কেউ টেস্টের নমুনা যেমন চুল, মূত্র, রক্ত, নিঃশ্বাস, ঘাম, মুখের লালা অথবা মানবদেহের যে কোনো অঙ্গ বা দেহ থেকে তরল পদার্থ দিতে না চান তাহলে অনূর্ধ্ব ১ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হবে। ডোপ টেস্টের প্রতিবেদন মামলা দায়ের, অপরাধের তদন্ত, অনুসন্ধান, বিচার অথবা অন্য কোনো প্রকার কার্যধারায় সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
যেখানে টেস্ট হবে : বিধিমালায় আওতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বিশেষায়িত ডোট টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে ও জনবল নিয়োগ দিতে পারবে।
এছাড়া বিধিমালার আওতায় গঠিত কমিটি সরকারি খাতের যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ডোপ টেস্ট করার স্থান হিসেবে নির্ধারণ করতে পারবে। এ কমিটির সভাপতি হবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও সদস্য সচিব হবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন)।
সদস্য হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিফ কনসালট্যান্ট, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক। এ কমিটির কাজ হচ্ছে মানবদেহে মাদকের উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি নির্ধারণ, মানবদেহের কোন উপাদান পরীক্ষা করা হবে তা নির্ধারণ, পরীক্ষণ পদ্ধতির মানদণ্ড নির্ধারণ, ডোপ টেস্টের ব্যয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া এবং টেস্ট সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন দেখা দিলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া।
১ ডিসেম্বর থেকে চালকদের ডোপ টেস্ট : ১ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চালকদের ডোপ টেস্ট করার ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরের গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরানো এবং সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বিশেষ যৌথসভায় এ কথা জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, ডোপ টেস্টে কেউ ধরা পড়লে জেল দেয়া হবে। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে, পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ টয়লেট থাকবে। সেখানে টিউব থাকবে, পরীক্ষা হবে। কেউ ধরা পড়লে তার লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি জেল দেয়া হবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ০৬,২০১৯)