ক্ষমা চাইলেন মসিউর রহমান রাঙ্গা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক, শহীদ নূর হোসেনকে জড়িয়ে বিতর্কীত বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
সোমবার রাতে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র দিবসের আলোচনায় আমি নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর ও ফেনমসিডিল খোর বলেছিলাম, এটা আসলে আমার স্লিপ অব টাং। ওই সময় ইয়াবা ছিল না, ফেনসিডিলও ছিল না। শব্দ দুটি আমার বলা ঠিক হয়নি। এ দুটি শব্দ আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, ক্ষমা চাইছি।’
শহীদ নূর হোসেনের পরিবার আপনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন, আপনি তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবেন কি না জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আপত্তি থাকবে কেন? তাদের সঙ্গে আমার তো ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। আমি মিডিয়ার মাধ্যমে নূর হোসেনের পরিবারের কাছেও ক্ষমা চাইছি।’
তিনি বলেন, ‘নূর হোসেনকে রাজনীতির বলী বানানো হয়েছে। তিনি সুস্থ প্রকৃতির লোক ছিল না। কোনো সুস্থ প্রকৃতির মানুষ গুলি খেয়ে মরতে যাবেন? এরশাদ সাহেবকে ফাঁসানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশেষ মহল নূর হোসেনের পিটে, বুকে স্লোগান লিখে দেয়। তারাই তাকে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশ গুলি করলে তার বুকে গুলি লাগার কথা, কিন্তু পেছনে লাগলো কীভাবে?’
‘‘বুকেপিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ এসব কথা তো আপনি আপনার বুকে আঁকতে বা লিখতে পারেন না। কেউ না কেউ এটা লিখে দিয়েছে। একজন সুস্থ প্রকৃতির মানুষ এটি কোনো সময় করতে পারে না। এটা কেউ না কেউ সাবোটাজ করেছে। একটা লাশের দরকার ছিল। সেটা তারা করেছে।’’
একইভাবে আমরা ডাক্তার মিলন হত্যারও প্রতিবাদ করেছি। তাকেও পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। এগুলো হলো রাজনীতির আলোচনা, দাবি করেন রাঙ্গা।
জাপা মহাসচিব বলেন, ‘নূর হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর কেন তার মা, পরিবার মামলা করল না? তাকে নিয়ে যারা চিৎকার করে সেই আওয়ামী লীগ, বিএনপিও মামলা করতে পারতো। কিন্ত এতো বছরেও কেউ মামলা করল না কেন, প্রশ্ন তোলেন রাঙ্গা।
তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন হত্যাকাণ্ডের নিয়ে মামলা করা হলে, তার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তো আছে। মামলা হলে তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য বের হয়ে আসতো।’
রাঙ্গা বলেন, ‘নূর হোসেন হত্যাকাণ্ডের একটা সুরাহা হওয়া দরকার। তাকে আসলে কারা গুলি করলো, এর সঙ্গে জড়িত কারা তা বের করতে হবে।’
নূর হোসেন ছাড়াও আপনি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন, তাকে স্বৈরাচার বলেছেন, এ প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, ‘‘দেখেন, বিএনপি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে রাজনীতি করার জন্য আমাদের স্বৈরাচার বলতে পারে, যদিও এটা ঠিক না। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো সেটা বলতে পারে না। কারণ তারা এখন আমাদের শরীক দল। ভবিষ্যতেও আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। তাহলে তারা কেন এ কথা বলবে। যদি তারা জোটে না থাকতো তাহলে অন্য কথা। কিন্ত রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে তারা আমাদের নেতাকে স্বৈরাচার বললে খারাপ লাগে। নেতা-কর্মীরা সেটা মানতে পারে না। তা ছাড়া এখনতো পার্টির চেয়ারম্যান বেঁচে নেই। তার অবর্তমানে কেন বলবে? গ্রামে-গঞ্জে তাদের চুনোপুটি নেতা-কর্মীরা এসব কথা বলে। মামলা, হামলা ও জেলের ভয় দেখায় আমাদের নেতা-কর্মীদের। আমরা তো তাদের শরীক দলের নেতা-কর্মী। তারা ভয় দেখাবে কেন? তাদের নেতারা তো কর্মীদের মানা করতে পারেন, কিন্তু তারা করে না। এসবের জন্য গ্রামে আমাদেরকে নেতা-কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। তারা আমাদের বলে, আপনারা তো সরকারের দালাল, তারপরও কেন আমাদের ওপর সরকারি দলের নেতারা হুমকি ধামকি দেয়। তখন আমরা কোনো জবাব দিতে পারি না।’
রোববার বনানীতে জাপার চেয়ারম্যান কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’-এর এক আলোচনা সভায় রাঙ্গা বলেছিলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন? নূর হোসেনকে? কে নূর হোসেন? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ১২,২০১৯)