দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে দাবি করেছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পক্ষে সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী এই দাবি করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এদিন বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে করা বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘ভারতে হঠাৎ বন্যার কারণে আমাদের পেঁয়াজের বাজার গরম হয়ে যায়। এ সময় ভারত পেঁয়াজ রফতানিও বন্ধ করে দেয়। তবে আমরা অতিসত্বর তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘এই সিজনটি একটি লিন সিজন। এ সময় একটা সংকট থাকে। আমাদের নতুন পেঁয়াজ এখনও ওঠেনি। কিছুদিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করেছি। ভারত থেকেও আমদানি চালু হয়েছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে।’

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট চালু আছে। কোথাও যেন বেশি দামে কেনাবেচা না হয়, সেজন্য কাজ করছেন তারা। ভোক্তা অধিকারসহ আমাদের সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।’

এর আগে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের আনোয়ার হোসেন খানের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশে বার্ষিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে উৎপন্ন হয়েছে ২৩ দশমিক ৩১ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ সংগ্রহকালীন ও সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩১ লাখ মেট্রিক টন। ভারত থেকে আমদানি করে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ করা হয়। কিন্তু ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ২৫০-৩০০ ডলারের পরিবর্তে ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে। পরে ভারতের স্থানীয় বাজারে অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রিসহ মনিটরিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ভারতের রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ অন্যান্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বগুড়া-৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, সার্কভুক্ত ৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে রফতানি হয় ১ হাজার ৪০৮ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। এ সময় আমদানি হয় ৮ হাজার ৩৯৬ দশমিক ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারর পণ্য। ঘাটতি ৬ হাজার ৯৮৮ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৭ হাজার ৭৪৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাকিস্তানের সঙ্গে ৪৭১ দশমিক ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ভুটানের সঙ্গে ২৭ দশমিক ৯০ মার্কিন ডলার, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১৬ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, মালদ্বীপের সঙ্গে ১২ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প থেকে অর্জিত হয়।

সংরক্ষিত আসনের নাজমা আকতারের প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, দেশের (২০১৮-১৯ অর্থবছরের বিবিএস প্রাক্কলিত) ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার জনসংখ্যা হিসাবে মোট চালের চাহিদা ২ কোটি ২১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন ও গমের চাহিদা ১১ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিন টন। প্রাক্কলিত উৎপাদন চাল ৩ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ও গম ১১ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন। ফলে বলা যায়, দেশে সার্বিকভাবে চালের ঘাটতি নেই। তবে গমের ঘাটতি রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ১২,২০১৯)