৩ ডাক্তারের যৌন লালসা ফাঁস করলেন মেডিকেল ছাত্রী
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এসব শিক্ষককে নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ওই কলেজের সাবেক এক ছাত্রী। ওই স্ট্যাটাস দেয়ার পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।
ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত (DAMC:The Students United-G) ফেসবুক গ্রুপে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন ওই ছাত্রী। শিক্ষকদের হাতে তার মতো আরও অনেক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন, একই সঙ্গে যৌন হয়রানির নানা তথ্য সংযুক্ত করেছেন তিনি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে বর্তমানে ঢাকায় একটি হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন।
মেডিকেল কলেজের এফ-৩ ব্যাচের ওই ছাত্রী একই প্রতিষ্ঠানের রেসিডেনসিয়াল ফিজিশিয়ান ডা. ঝিলাম জিয়া, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ ও এন্ডোক্রাইনোলজি ডায়াবেটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কে এম নাহিদুল হকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন।
মেডিকেল কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের ফেসবুক গ্রুপে ওই ছাত্রী লিখেছেন, ‘ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজে কিছু বিবাহিত ডাক্তার এবং আমাদের শিক্ষক আছেন, যাদের কেউ কেউ অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আড়ালে এবং কেউ কেউ সাহসের সঙ্গে জনসম্মুখে ছাত্রীদের অশ্লীল কথাবার্তা ও ইঙ্গিত, বিনা অনুমতিতে গায়ে হাত দেয়া এবং বুলানো, এমনকি মাঝরাতে ফোন দিয়ে (যেদিন তাদের স্ত্রীরা বাসায় থাকেন না) যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দেন। কেউ কেউ যৌন সম্পর্ক ভিক্ষা চান। ওই দিকে যাওয়ার জন্য একাধিক কায়দায় ফোনে, চ্যাটে, মেসেজে, ভিডিওকল দিয়ে হয়রানি করেন। একাধিক ছাত্রীকে একইভাবে প্রস্তাব দিয়ে আসছেন তারা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কেউ আবার চাকরি ও চিকিৎসা দেয়ার নাম করে চেম্বার আওয়ার শেষে এবং ছুটির দিনে চেম্বারে ডেকে দরজা লক করে বিনা অনুমতিতে গায়ে হাত দেন, এমনকি জড়িয়ে ধরেন। এদের মাঝে ছাত্রী বা জুনিয়র-সিনিয়র ফিমেল কলিগদের প্রতি কোনো সম্মানবোধ নাই। তারা শুধুই দেখেন কে দেখতে কেমন, কার শরীর কত আকর্ষণীয় এবং কাকে কিভাবে ভাগে আনা যায়। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করা যায়।’
‘আমার ‘জানামতে’ এবং ‘অভিজ্ঞতামতে’ এরা হলেন- ডা. ঝিলাম জিয়া (মেডিসিন), ডা. কে এম নাহিদুল হক ও ডা. হারুনুর রশীদ (মেডিসিন)। গতকাল শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে সাড়ে ১১টায় ইমো খোলার সঙ্গে সঙ্গে ডা. ঝিলাম জিয়া আমাকে মেসেজ এবং ভিডিও কল দিতেই থাকেন। চতুর্থ বর্ষে থাকাবস্থায় ক্লাস চলাকালে আমার ফোন নাম্বার নেন ডা. ঝিলাম জিয়া। সেদিন থেকে বহুবার আমাকে মেসেজ করেছেন, যা তিনি আরও বহু ছাত্রীর সঙ্গে করেছেন।’ উল্লেখ করেন তিনি।
স্ক্রিনশট দিয়ে ওই ছাত্রী লিখেছেন, ‘স্ক্রিনশট যা দেখছেন, এরপর তিনি হঠাৎ কল দিয়ে আমার সঙ্গে প্রেমের আলাপসহ আমাকে সেক্সচুয়ালি কতখানি স্বামী সন্তুষ্ট করার ক্ষমতা রাখেন, তার চোখ কই কই যায়, আর কি কি ভালো লাগে, কি কি তিনি ছুঁয়ে দেখতে চান এসব কথা বলেন। এসব আমি রেকর্ড করে রেখেছি। স্ক্রিনশটে দেয়া নম্বর তার ব্যক্তিগত, নিশ্চিত হতে চাইলে ফোন দিতে পারেন।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আর ডা. কে এম নাহিদুল হক কি কি বিস্ময়কর কাজ চেম্বারের সময় শেষ হওয়ার পর এবং ছুটির দিনে চেম্বারে ডেকে চাকরি-চিকিৎসা দেয়ার নামে দরজা লক করে করেছেন, সেগুলো আর কেউ বলতে রাজি না হোক, আমি জানি, আমার সাবেক কলিগদের কাছে জেনে নিশ্চিত হতে পারেন। আমার দেখা সবচেয় চালাক নাহিদুল হক। তার এসব কাজকর্মের প্রমাণ দেখানো কঠিন। অপকর্ম ধামাচাপা দেয়ার জন্য তিনি একাধিক মানুষকে কর্মস্থলে এমনকি তাদের বাসায় গিয়ে পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন, এমনকি হাসপাতালের ওয়ার্ডে মারতে পর্যন্ত গেছেন। তার বিষয়ে কলেজের বেশ কয়েকজন প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার এবং প্রাক্তন ইন্টার্ন ডাক্তার সাক্ষ্য দিতে পারবেন।’
তিনি লিখেছেন, ‘সবশেষে ডা. হারুনুর রশীদের কথা আর কি বলব? তিনি ক্লিনিক্যাল ক্লাসে শুধুমাত্র ছাত্রীদের কাছে ডাকেন, বিনা অনুমতিতে গায়ে হাত দেন-আদর করেন। সেগুলোর সরাসরি শিকার এবং কাউকে শিকার হতে দেখা-দুটোই অত্যন্ত অস্বস্তির ব্যাপার। পরীক্ষার ফলাফল তার হাতে-এজন্য অনেকেই নীরবে সহ্য করে, প্রতিবাদ করে না আর এসব প্রকাশও পায় না। কলেজের মেয়েদেরকে বলে রাখি, মেয়েরা, সাবধান হও। তোমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং কর্মস্থলের, এমনকি রোগী হয়েও এদের হাতে নিরাপদ নও।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ১৭,২০১৯)