ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা। প্রায় প্রতিদিনই ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রবেশ করছে নারী-পুরুষ ও শিশু। চলতি মাসে দুই শতাধিক অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (৫৮ বিজিবি)।
তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। যাদের কাছে কোনো দেশেরই বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা নেই। তাদের কেউ দুই বছর, কেউ পাঁচ থেকে দশ বছর পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে বসবাস করছিলেন। অনেকে এর থেকে বেশি সময় ধরে সেদেশে বসবাস করছেন বলে জানিয়েছে আটককৃতরা।
সম্প্রতি ভারত সরকার সেদেশের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশ করে। সেখানে নাম না থাকায় নির্যাতনের ভয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করছেন এসব বাঙ্গালী।
তবে এসব অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি করছে বিজিবি।
জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় ২১৪ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর মধ্যে গত দুই দিনে আটক হয়েছে ১১ জন। আটকদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ৩ জন শিশু। আটকরা জানিয়েছেন সীমান্তের ওপারে অপেক্ষমাণ আরও অসংখ্য নারী-পুরুষ।
বিজিবির ভাষ্য, আটক হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। আটকরা বিজিবিকে জানিয়েছে, ভারতে জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) আতঙ্ক ও নানা চাপের কারণে তারা ভারত ছেড়েছেন। মহেশপুর উপজেলায় ভারতীয় সীমান্ত এলাকা রয়েছে ৫৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে কাঁটাতার বিহীন এলাকা রয়েছে প্রায় ১১ কিলোমিটার। কাঁটাতারবিহীন এলাকা দিয়েই বেশি অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে বিজিবি ও পুলিশ জানিয়েছে।
লেবুতলা ও পলিয়ানপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, ভারত থেকে সবসময়ই মানুষ আসে। মাঝরাত ও সকালের দিকে বেশি লোক ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে ইছামতি নদী পার হয়ে কাঁটাতার বিহীন এলাকা দিয়ে। তবে বিকেলের দিকেও মাঝে মধ্যে লোক আসে। বিজিবি যে পাশে থাকে বিপরীত পাশ দিয়ে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে লোক ঢুকে পড়ে। ভারত থেকে এভাবে যদি লোক আসে সেটা তো আমাদের সমস্যাই।
বিজিবির হাতে আটক আদালতে সোপর্দ হওয়া কয়েকজন জানান, আমাদের কোনো নাগরিকত্ব ছিলো না। ভারতেও গিয়েছিলাম পাসপোর্ট বিহীন অবস্থায়। এখন দালাল ধরে চলে এসেছি। কারণ মালিকরা আমাদের টাকা-পয়সা দেন না।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ বিজিবি-৫৮ পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল আহসান জানান, এখন পর্যন্ত যারা এ দেশে এসেছেন তাদের বেশিরভাগই মুসলমান। তারা জানিয়েছেন, মূলত এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আতঙ্কে সীমান্ত ক্রস করছেন। বিষয়টি তিনি হেড কোয়ার্টারকে জানিয়েছেন। তারা আসাম থেকে এসেছেন কি-না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
বিজিবি পরিচালক আরও জানান, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ, তাদের মধ্যে কেউ যৌন কর্মী হয়ে থাকতে পারেন। তাদের দেহে এইডস জীবাণু রয়েছে কি-না পরীক্ষা করা দরকার।
বিষয়টি নিয়ে জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফোরামের মুখপাত্র আমিনুর রহমান টুকু জানান, এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে ভারতের আসামে এনআরসির পর থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ বেড়েছে। তারা আদৌ বাংলাদেশি কি-না, সেটি খতিয়ে দেখা জরুরি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ২৩,২০১৯)