প্রশ্নফাঁস করে আগের দিন নিজের মেয়ের পরীক্ষা নিলেন প্রধান শিক্ষক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজের মেয়েকে ভালো ফল করাতে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অষ্টম শ্রেণির মডেল টেস্টে নিজের মেয়েকে ভালো ফল পাইয়ে দিতে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠে।
বিষয়টি হাতেনাতে ধরার পর ওই শিক্ষকের কাছ থেকে ‘সুবিধা’ নিয়ে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা শিক্ষা অফিসার।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে যে, দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসার ও নৈতিক স্খলনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পারকৃষ্ণ গোবিন্দপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী গত ২২ অক্টোবরের ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ পরীক্ষার আগের দিন (২১ অক্টোবর) প্রশ্নপত্র ফাঁস করে প্রধান শিক্ষক তার অফিস কক্ষে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া তার নিজের মেয়ের পরীক্ষা নেন। বাকি ৯২ জনের পরীক্ষা নির্ধারিত দিনেই নেওয়া হয়। এছাড়া, গত ২১ অক্টোবর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ে সব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা শ্রেণিকক্ষে নেওয়া হলেও তার নিজের মেয়ের পরীক্ষা নেন অফিস কক্ষে।
প্রধান শিক্ষকের মেয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ। তার রোল নম্বর ২। নিজের মেয়ের রোল নম্বর ১ করার জন্য এই অনৈতিক কাজ করেছেন প্রধান শিক্ষক। জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল লতিফ এই ঘটনা হাতেনাতে ধরে ফেলার পরও তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ব্যবস্থা নেননি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জেলা শিক্ষা অফিসারের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ঘটনার পর তিনি যেমন স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছেন, তেমনি স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির মাধ্যমেও আর্থিক লেনদেনে প্রভাবিত হয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিজের মেয়েকে পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো ফল পাইয়ে দিতে প্রধান শিক্ষক মো. আল মেহেদী হাসান তার অফিস কক্ষে নির্ধারিত সময়ে আগের দিন প্রশ্নফাঁস করে গোপনে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ পরীক্ষা নেন।
বিষয়টি জানতে পেরে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল লতিফ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাতেনাতে তাদের ধরে ফেলেন। পরীক্ষা চলাকালে অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।
তারা জেলা প্রশাসককে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি জানালে তিনি জেলা শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং জেলা শিক্ষা অফিসার জেলা প্রশাসককে আশ্বস্ত করলেও কোনও ব্যবস্থা নেননি।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো. আল মেহেদী হাসান অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘পরীক্ষাটি ছিল অভ্যন্তরীণ, জেএসসির মডেল টেস্ট। জেলা শিক্ষা অফিসার স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। কমিটিও মাফ করে দিয়েছে। কেউ হয়তো হিংসা করে আমার ক্ষতি করার জন্য আবারও অভিযোগ করেছে।’
তবে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল লতিফ হাতেনাতে ধরার বিষয়টি স্বীকার করলেও প্রধান শিক্ষককে ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘তিনি ক্ষমা চেয়েছেন, আমি তা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি। আমি কেন ক্ষমা করবো।’ এ কথা বলার পর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন জেলা শিক্ষা অফিসার।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শাখা প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কাজ ও প্রশ্নফাঁস, শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বে অবহেলার বিরুদ্ধে এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটি এবং সহকারী শিক্ষকদের প্রতি কাঠোর নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ২৪,২০১৯)