দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের পর থেকে বিএনপি সমাবেশ করতে আর কোনো অনুমতি নেবে না। আজকের এ সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সকাল ১০টায়। এখন থেকে আমাদের সমাবেশ আমরা যখন প্রয়োজন হবে করব। আমরা রাজপথে নামব, এটা আমাদের অধিকার। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার যে, আমি প্রতিবাদ করতে পারব।

রোববার ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

‘কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি’ উপলক্ষে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ফখরুল বলেন, আজকে ঐক্যের প্রয়োজন। সমস্ত মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সমস্ত মানুষ ও দল মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে দূর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। আর আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই তাদেরকে উৎখাত করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের ভোট ও কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে সকাল ১০টা সময় বলেছে, আপনারা সমাবেশ করতে পারবেন! কিন্তু এরপর আমরা আর কোন অনুমতি নেবো না। আমাদের সমাবেশ যখন প্রয়োজন তখন আমরা করবো। আমরা রাজপথে নামবো। এটা আমাদের অধিকার।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ফখরুল আরো বলেন, আমাদের বন্ধুরা স্লোগান দেন অমক দল জিন্দাবাদ, উত্তর আর দক্ষিণ। এগুলো স্লোগান না দিয়ে স্লোগান দিন, এই সরকার নিপাত যাক, দেশনেত্রীর মুক্ত চাই। এই স্লোগান দিতে হবে।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই নির্বাচনকে বাতিল করুন। নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

ফখরুল বলেন, প্রায় ২০ মাস ধরে বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আমরা সবাই জানি তাকে শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সাজা দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করবার জন্য বর্তমান সরকার সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে অন্যায়ভাবে বেগম জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাদের বিচারকরা বারবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আজকে আদালত এই সরকারের নিয়ন্ত্রণের কারণে আমাদের নেত্রী আজকে মুক্তি পাচ্ছেন না। তাই এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আমাদের নেত্রীকে মুক্তি করতে হবে। আর কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ঘণ্টা বাজিয়ে উদ্ধোধন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এই সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিচারকরা মুক্ত মনে কাজ করতে পারেন না। সেই কারণে আজকে বেগম জিয়া জেল খানায়। এরপরও আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকারের প্রভাবে কারণে সেটা হয়নি। সেই কারণে প্রয়োজন আন্দোলন। এজন্য শুধু স্লোগান দিলে হবে না। কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার ও আদালত আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে না। আর এই সরকার থাকলে খালেদা জিয়া মুক্ত হবে না। তাই এখন আমরা সরকার পতনের আন্দোলন করবো না কি খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করবো। সুতরাং আপনারা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি হন।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে দেশে আইনের শাসন নেই। সেখানে আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের নেত্রীকে বের করে নিয়ে আসবো, এটা বিশ্বাস করা যায় না। আমাদেরকে রাস্তার নেমে আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রীকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় ঘোষিত এই কর্মসূচি শনিবার সারাদেশের জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করেছে বিএনপি। তবে রাজধানীতে এই সমাবেশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশি অনুমতি না পাওয়ায় ওইদিন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর ১২টা থেকে নগর বিএনপির থানা ও ওয়ার্ডসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ব্যানার ও ফেসটুন নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিলসহ সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গেছে। এসময় মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইসহ বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ বক্তব্যে রাখেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ২৪,২০১৯)