দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা গত সপ্তাহে ঢাকাসহ সারাদেশে ‘ধর্মঘট’ ডেকে অচলাবস্থার সৃষ্টি কারলেও শাজাহান খান জানিয়েছেন, তারা কোনো ধর্মঘট ডাকেননি। উল্লেখ্য যে, শাজাহান খান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি।

‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ স্থগিত ও সংশোধনসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে গত বুধবার (২১ নভেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তবে ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘট না ডাকলেও ২১ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বাস চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে সাংবাদিকরা শাজাহান খানের বক্তব্য জানতে চান। প্রথমে তিনি কথা বলতে চাননি। সাংবাদিকরা জানতে চান, আপনারা ধর্মঘট ডাকেন মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটালে চালকের জামিন চাইছেন কেন- এ বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘দাবিটা ছিল এ কারণে যে, আপনারা কিন্তু পত্রপত্রিকায় লেখেন এখনও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। বাস্তবতাটা আপনারা উপলব্ধি করতে পারছেন কি-না আমি জানি না। বাস্তবতাটা হলো, লাইসেন্সের কথা মাননীয় মন্ত্রী বলছেন, অনেক ঘাটতি আছে, লাইসেন্স দিতে পারছে না বিআরটিএ। ভুয়া ও ফেক লাইসেন্স নিয়ে যদি কেউ গাড়ি চালায় তার তো জরিমানা হবে, জেল হবে। সে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালাতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘অনেক গাড়ির ফিটনেস না থাকায় সেই গাড়ি আইনের কারণে চালাতে পারছে না, ওই আইনের কারণে। সে জন্য রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম। এই বাস্তবতাটা আপনারা লেখেন না, লেখেন স্বাভাবিক হয়নি। আমি মনে করি সবই স্বাভাবিক চলছে। লাইসেন্স ও কাগজপত্র নেই, সে কারণে (গাড়ির) ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি বলেন, ‘কয়েকটি ধারা জামিনযোগ্য করার বিষয়ে বলা হয়েছে, একজন ড্রাইভার কত টাকা আয় করে। সে তার সীমিত আয় দিয়ে সংসার পরিচালনা করে। একজন ড্রাইভার মাসে ১৫ দিনের বেশি গাড়ি চালাতে পারে না। ১৫ দিনের আয় দিয়ে তাকে এক মাস সংসার পরিচালনা করতে হয়। জেল যা আছে সেটা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা সরকারের কাছে দাবি করেছি, একজন ড্রাইভার যদি দুর্ঘটনা ঘটান সে যদি দীর্ঘদিন জামিন না পান তবে ড্রাইভারের ঘাটতি পড়ে যাবে। এক বছরে সারাদেশে ৩-৪ হাজার দুর্ঘটনা হয়, তাহলে ৩-৪ হাজার ড্রাইভারের ঘাটতি পড়ে যাচ্ছে। আমরা এখনও কিন্তু ৩-৪ হাজার ড্রাইভার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে পারছি না, আমাদের সেই ক্যাপাসিটি নেই।’

শাজাহান খান বলেন, ‘এ কারণেই বলেছি দুর্ঘটনা ঘটালে তদন্ত করে বিচার হবে সেই বিচারে যা হওয়ার হবে, কিন্তু সে (ড্রাইভার) যেন জামিনটা পায়। এতে ঘাটতির জায়গাটা পূরণ হবে।’

তবে তো দুর্ঘটনা আরও বাড়বে- একজন সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক নয়। কেউ যদি একবার অপরাধ করে, সেই কিন্তু অপরাধ ইচ্ছা করে করে না, করতে চায় না।’

রাস্তায় আবার কোনো অচলাবস্থা হবে কিনা- জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, ‘শোনেন, অচলাবস্থা..., আমরা কেউ ধর্মঘট ডাকিনি। আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। যেটা মন্ত্রী মহোদয়ও প্রমাণ পেয়েছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে...আপনারা যেটা বলেছেন ফাঁসি হবে, এই হবে সেই হবে- এ সব অপপ্রচারের কারণে শ্রমিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এই অচলাবস্থা করেছে।’

আপনারা সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তে পুলিশের সঙ্গে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (এআরআই) সংযুক্ত করার কথা বলেছেন। তবে কি পুলিশের ওপর আপনাদের আস্থা নেই- শাহাজান খানের উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্ন করা হলেও এর জবাব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ইনভেস্টিগেশন পুলিশই করবে, এটাই আইন। তবে যখনই প্রয়োজন হবে সিরিয়াস কোনো অ্যাকসিডেন্ট হলে তখন এক্সপার্ট অপিনিয়নের জন্য এআরআই’র পরামর্শ নেয়া হবে। জটিল ও স্পর্শকাতর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের পুলিশরাই এআরআইর পরামর্শ নিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও সেগুলো নেবেন। এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ২৪,২০১৯)