‘পাহাড়ে জমি লিজ নিয়ে জেএমবির প্রশিক্ষণ ক্যাম্প’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের অপারেশনাল ও লজিস্টিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, স্পেশালাইজড নতুন ইউনিট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট গঠন, বাহিনীর সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ এ যাবৎ বেশকিছু বড় ধরনের সফল অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ করেছে।
তবে সরকারের কঠোর অবস্থানের পড়েও পার্বত্য অঞ্চলে জমি লিজ নিয়ে পুরনো জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল বলে জানিয়েছেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
জেএমবির আমিরসহ গ্রেপ্তার তিনজনের বরাত দিয়ে তিনি এসব তথ্য জানান। রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন সাইদনগর এলাকা থেকে জেএমবির আমিরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- জেএমবির আমির আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আব্দুল হাদী, হাবিবুর রহমান ওরফে চাঁন মিয়া ও রাজিবুর রহমান ওরফে রাজিব ওরফে সাগর।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থাকা ১৫০টি ডেটোনেটর, জিহাদি বই, একটি কমান্ডো ছুরি ও ২০ পিস জেলজাতীয় বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, আবু রায়হান টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা অবস্থায় ২০১০ সালে মৃত তালহা এবং মৃত ডা. নজরুলের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করে। সংগঠনের প্রতি একাত্মতা এবং বিশ্বস্ততার কারণে ২০১২ সালে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তিনি কক্সবাজারে গিয়ে লেখাপড়াসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার দায়ী (দাওয়াতি) শাখার প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম করতে শুরু করেন। ওই সময় তালহা প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য এক ব্যাগ কমান্ড ছুরি আবু রায়হানকে দেয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১৩ সালের মাঝামাঝি সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেপ্তার আবু রায়হান জঙ্গি খোকনের চাচাতো শালিকে বিয়ে করেন। আবু রায়হান ওই ছুরির ব্যাগ কক্সবাজারের নুরুল হাকিমের কাছে দেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নুরুল হাকি সংগঠনের আরও সদস্যসহ ৩০টি কমান্ডো ছুরি ও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তার হাবীবুর রহমান জেএমবির ইসাবা গ্রুপের প্রধান হিসেবে সংগঠন চালানোর অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করত। সে গত বছরের ২৯ মার্চ দক্ষিণ খান থানার পীর সাহেবের বাড়িতে ডাকাতির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সে পুনরায় জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করে।’
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আবু রায়হান হচ্ছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পলাতক জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীর শ্যালক। সালেহী নিজেকে গ্লোবাল জেএমবির আন্তর্জাতিক আমির ঘোষণা করে। তখন জেএমবির আমির ছিল খোরশেদ আলম। খোরশেদ নিহত হওয়ার পর ২০১৭ সালে আবু রায়হানকে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির ঘোষণা করা হয়। রোববার (২৪ নভেম্বর) আবু রায়হান গ্রেপ্তার বাকি দুই জঙ্গি চাঁন মিয়া ও রাজিবুর রহমানকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। হাবিবুরের বাসা ঢাকাতেই। আর রাজিবের বাড়ি নেত্রকোনার সীমান্ত এলাকায়। তার বাড়িতে নতুন জঙ্গি সদস্যরা সহজেই মিলিত হতো। গ্রেপ্তার তিনজন মূলত ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের আত্মীয় মাওলানা রাকীব নামে এক ব্যক্তি বিদেশে থেকে এদের অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে’।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জঙ্গিরা সবসময় হামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল এবং হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। তবে তাদের নেটওয়ার্ক শুরুতেই ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরা নব্য জেএমবির সাথে ইতিপূর্বে যোগাযোগ করেছে কি না তা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের ওপর নব্য জেএমবির যে গ্রুপটি হামলা চালিয়েছিল, তার প্রত্যেকটিতে ৫ জনের একটি জঙ্গি সেল ছিল। তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করা গেছে। ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দু’জন এখন দৌড়ের ওপর আছে। তাদের ছবিও পুলিশের কাছে এসেছে। তাদের সেই সেল ভেঙে দেয়া হয়েছে। আর নতুন করে যাতে সেল গঠন হতে না পারে সে জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
পাহাড় এলাকা মানুষের যাতায়াত কম থাকায় জঙ্গিরা ওই এলাকাকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিরা কার মাধ্যমে কিভাবে জমি লিজ নিয়েছিল সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা একজনকে চিহ্নিত করেছি, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ২৫,২০১৯)