দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় আজ (২৭ নভেম্বর) ঘোষণা করা হবে। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান বেলা ১২টার দিকে এ রায় ঘোষণা করবেন। এজন্য ঢাকার আদালত পাড়ায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রায় ঘোষণার জন্য কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকাল ১০টায় আসামিদের পাঠানো হবে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে আসামিদের এজলাসে উঠানো হবে। বেলা ১২টার দিকে রায় ঘোষণা করা হবে। রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে তাদের সরাসরি প্রিজন ভ্যান দিয়ে আবারও কারাগারে পাঠানো হবে।

আজ মামলা দায়েরের তিন বছর চার মাস পর দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মামলায় ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১১৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছেন মামলার আট আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে। অপরদিকে আসামি পক্ষ ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছেন।

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আমরা সাক্ষ্য প্রমাণে তা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আসামিরা অপরাধী। তাই আমরা আশা করছি, ৮ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেবেন বিচারক।

সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার খান জাকির বলেন, রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রায়ে ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড আশা করছি। আমরা সাক্ষ্য প্রমাণে তা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আসামিরা অপরাধী। তাই আমরা আশা করছি, ৮ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেবেন বিচারক।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাক্ষীর জেরা ও যুক্তি উপস্থাপনে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি আসামিরা অপরাধ করেননি। তাই আমরা রায়ে আদালতের কাছে ন্যায় বিচার চাই।

এর আগে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার আদালত পাড়া পরিদর্শন করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম ও কৃষ্ণ পদ রায়। পরিদর্শন শেষে তারা আদালত পাড়ার বিশেষ নিরাপত্তায় লালবাগ ডিভিশন ও আদালতের ডিসি প্রসিকিউশনকে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।

ঢাকার আদালতের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি প্রসিকিউশন) জাফর হোসেন বলেন, হলি আর্টিজান মামলার রায় উপলক্ষে ডিএমপির দুই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আদালত এলাকা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও হামলার কোনো আশঙ্কা নেই, তবে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে।

ঢাকা মহানগর আদালতের হাজতখানার ওসি মঈনুল ইসলাম বলেন, হাজাতখানা থেকে এজলাসে আসামিদের আনা নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় পরে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে পুলিশ।

গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর (বুধবার) দিন ধার্য করেন।

মামলা দায়ের করার পর ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। একই বছর ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

মামলার আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

এছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

হলি আর্টিজানে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

এছাড়া এ মামলায় আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে আটজন নিহত হয়। তারা হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ২৭,২০১৯)