রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততায় ভারত সফরে যাননি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বিজয় দিবসকে সামনে রেখে স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে ভারত সফরে যাননি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরের সঙ্গে বয়কটের কোনো বিষয় নয়। এটা আমি যতটুকু জানি, বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস একদম আমাদের দুয়ারে সমাগত। রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে তারা ভারত সফরে নাও যেতে পারে। তবে, পরবর্তীতে যাবেন।’
‘তাই বলে সফর চিরতরে বাতিল হয়নি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে, গঠনমূলক বন্ধুত্ব রয়েছে। এটা যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সে ব্যাপারে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব’, বলেন কাদের।
এনআরসি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত একটি স্বাধীন-স্বার্বভৌম দেশ। তাদের পার্লামেন্টে যদি কোনো আইন পাস হয়, সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের সেখানে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তবে, যে বিষয়গুলো আমাদের অ্যাফেক্ট করে বা আমরা প্রতিক্রিয়াটা আমাদের কাছে আসে বা আমরা অ্যাফেক্টেড হই, অবশ্যই আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে সেখান থেকে অলরেডি বক্তব্য রাখা হয়েছে। পররাষ্ট্র থেকে যে বক্তব্য রাখা হয়েছে, এর বাইরে আমার কোনো ভিন্ন বক্তব্য নাই।’
‘শুধু এটুকু বলতে চাই, শেখ হাসিনার সরকারই হচ্ছে পচাত্তর পরবর্তী একমাত্র সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মাঝে মাঝে হয়তো একটা-দুটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, এত মানুষ, এখানে দুর্বৃত্ত আছে। দুর্বৃত্তায়নের চক্র আমরা ভেঙে দিতে চাই’, বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আসলে কোনো দলীয় পরিচয়ে হয় না। দুর্বৃত্তদের কোনো দল নেই। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বলতে যেটা বোঝায়, সেটি দগদগে চিত্র দেখা যাবে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর, সংখ্যালঘুদের ওপর যে বর্বরতা হয়েছে তার সঙ্গে। সেটি কেবল ’৭১-এর বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করা চলে।’
‘প্রত্যাগত প্রবাসী আওয়ামী ফোরামে’র প্রথম ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।
সরকার ভারতের সঙ্গে সমস্যাগুলো যার যার জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সামধান করতে চায় বলেও জানান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশে আজ আমাদের বিরোধীরা চুপচাপ বসে নাই। তারা সরকারকে হটানোর জন্য নানামুখী তৎপরতা করছে। চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে।’
‘শেখ হাসিনার সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য দ্রব্যমূল্যের ওপর ভর করেছে। দ্রব্যমূল্যের যাতে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হয়, সেদিকে তাদের একটা যোগসাজস আছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। কিছু কিছু বিষয় আমরা জেনেছি, বিরোধী দল থেকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে’, বলেন তিনি।
এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত মোকাবিলার জন্য নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এরই মধ্যে ২৯টি জেলার সম্মেলনের কাজ শেষ করেছি। এত অল্প সময়ে এটা অবিশ্বাস্য, এরপর করেছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুন করে দিয়েছি। সম্মেলনের ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা, জাগরণ তৈরি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভূত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। আমাদের প্রবৃদ্ধি আইএমএফেরও রিপোর্ট অনুযায়ী এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। আমাদের মাথাপিছু আয়, রপ্তানি, আমদানি সবকিছুর সূচকে আমরা এই দক্ষিণ এশিয়ার অনেককেই পেছনে ফেলে বিশেষ করে পাকিস্তান থেকে আর্থসামাজিক প্রত্যেকটি সূচকে উন্নয়নে এগিয়ে আছি।’
এ সময় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টারি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক হ্যাট্রিক বিজয় অর্জন করায় শুভেচ্ছা জানান ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে রুশনারা আলী, রুপা হক, আফসানা বাঙালি হিসেবে বিট্রিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচিত হওয়ায় তাদেরও অভিনন্দন জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মো. আবুল কাশেম।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ১৩,২০১৯)