পাক বাহিনীর মতো আ.লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে: মির্জা ফখরুল
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর মতো আওয়ামী লীগকেও আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, এভাবে অন্যায়-অবিচার, দমননীতি চালিয়ে অল্প কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যায়। চিরকালের জন্য থাকা যায় না। অতীতে যেভাবে স্বৈরাচার ও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, একইভাবে আজকের দখলদার ও হানাদার বাহিনী আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আজকের বিজয়ের দিনে এই হোক আমাদের শপথ।’
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মহানগর নাট্যমঞ্চে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
ওপরের নির্দেশে আজকে সবকিছু স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওপরের নির্দেশে বিচারক খালেদা জিয়ার রায় দেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। ৪৮ বছর পর আজকে আমাদের এ কথা বলতে হচ্ছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীও বলে ওপরের নির্দেশ আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে আশঙ্কা বা আতঙ্কের কথা, আমরা যখন আশা করি আমাদের ওপর নির্যাতনের কথা আদালতে বা বিচারকের কাছে বললে ন্যায়বিচার পাবো, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানেও মানুষ এখন ন্যায়বিচার পায় না। সেখানেও ওপরের নির্দেশে বিচার হয়। খালেদা জিয়া রায়ে পরিষ্কার হয়ে গেছে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। তাহলে কীভাবে আমরা বলতে পারি, বিজয় অর্জন হয়েছে? ৪৮ বছর পরেও আমাদের বলতে হচ্ছে আমরা স্বাধীন নই, আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। তারা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা শুধু তাদের উন্নয়নে বিশ্বাস করে।
আওয়ামী লীগ মানুষের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। অতীতে যেভাবে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, আগামী দিনে একইভাবে স্বৈরাচারের পতন ঘটানো হবে।
আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাকে আটক করে রাখার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশকে বিরাজনীতিকরণ করার জন্য ষড়যন্ত্র। আমি এই আন্দোলনে সবাইকে শরিক হতে আহ্বান জানাচ্ছি।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার দাবি করে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু এখানে আসার সময় দেখলাম, ফুটপাতে একটি পরিবার শুয়ে আছে। স্বামী ভিক্ষা করছে। এভাবে দেশের অনেক মানুষ না খেয়ে আছে। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের হাতে দেশের সম্পদ জিম্মি ছিল, এখন ২২ হাজার বা ২২ লাখ পরিবারের হাতে সম্পদ জিম্মি। দেশের দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে দেশের স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে আমরা চিন্তিত। কারণ, মেরুদণ্ডহীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনও বিষয়ের প্রতিবাদ করতে পারছে না। ভারত এনআরসি’র (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিপদগ্রস্ত করছে, কিন্তু বাংলাদেশের সরকার কোনও প্রতিবাদ করতে পারছে না।
বিএনপি ভারতকে শত্রু মনে করে না বলে উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ কিন্তু ভারতের কথাবার্তায় মনে হয় তারা আমাদের শত্রু মনে করে। বাংলাদেশে শুধু আওয়ামী লীগ ভারতের বন্ধু। এনআরসির কেবল ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, অন্য দেশের জাতীয় স্বার্থে আঘাত লাগলে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে চাপা দেওয়া যাবে না। আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান , বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ১৮,২০১৯)