শৈত্যপ্রবাহের কবলে ৭ জেলা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শীতে জবুথবু উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশ। রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
আজ শুক্রবার আরও কয়েকটি জেলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়বে, যা আগামী রোববার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়, ৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে শীতের প্রকোপে দুর্ভোগে পড়েছে দরিদ্র-দুস্থ মানুষ। শীতজনিত নানা রোগের প্রকোপ বাড়ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্ত দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়েও তেমন উদ্যোগ নেই। নিজস্ব প্রতিবেদক ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বিস্তারিত।
ঢাকা- গতকাল রাজধানীর সকালটা ছিল কুয়াশার চাদরে মোড়ানো। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। রাত থেকেই বইছে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ এক দিন আগে তা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীত জেঁকে বসায় গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বারিধারাসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে শীতের পোশাক কিনতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বুধবার থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। গতকাল তা আরও প্রকট হয়। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই হিসাবে দেশের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, আজ শুক্রবার সারা দেশেই শীত আরেকটু বাড়বে। সঙ্গে কুয়াশা থাকবে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহে আক্রান্ত হবে আরও কয়েকটি জেলা। রোববারের পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে।
পঞ্চগড়- ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তুরে হাওয়ায় পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের প্রকোপ বাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছে সীমান্তসংলগ্ন জেলাটির নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ; বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জেলায় প্রায় দুই লাখ দুস্থ শীতার্তের বিপরীতে শীতবস্ত্র বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৮ হাজার। সেই হিসাবে সাত-আটজন শীতার্তের মধ্যে শীতবস্ত্র পাবে মাত্র একজন। এ ছাড়া প্রশাসন থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হলেও গতকাল পর্যন্ত তা অনেক এলাকায় পৌঁছেনি।
সরেজমিনে পঞ্চগড় সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দরিদ্র পল্লীগুলোতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে মানুষ। কামাত কাজলদিঘি ইউনিয়নের টেংনাপাড়া এলাকার ফজল উদ্দিন বলেন, ঠাণ্ডার কারণে রাতে ঘুমানো যায় না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সময়মতো কাজেও যেতে পারি না। অথচ প্রকৃত গরিব মানুষ শীতবস্ত্র পাচ্ছে না। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা তাদের স্বজনদের নামেই বরাদ্দ দেয়। পেত্তানিরহাট এলাকার গৃহবধূ আলিফ নুর আক্তারও একই অভিযোগ করেন।
এমন অভিযোগ পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার অনেক এলাকারই। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ করায় তাদের স্বজনপ্রীতিতে বাদ পড়ছে দরিদ্র শীতার্তরা।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা রাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রকৃত দুস্থদের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত ২৮ হাজার শীতবস্ত্র পাঁচ উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম। আরো শীতবস্ত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’
নীলফামারী- জেলায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে। আকাশ থাকছে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া কৃষিশ্রমিক। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র পরিবারের মানুষগুলো। বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই।
শীতার্ত দরিদ্রদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ শীতবস্ত্র প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এ হায়াত জানান, জেলার ছয় উপজেলায় দুই দফায় সরকারিভাবে ৩৭ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২০ হাজার কম্বলের চাহিদা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী)- তীব্র শীতে বিপর্যস্ত নীলফামারীর সৈয়দপুরের জনজীবন। গতকাল সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেরসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটিই চলতি শীত মৌসুমে এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। হাড়-কাঁপানো ঠাণ্ডা, ঘন কুয়াশা আর কনকনে হিমেল বাতাসে শীতবস্ত্রের অভাবে বিপাকে পড়েছে মানুষ। বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর-ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে শিডিউল মেনে এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও- হিমালয়ের পাদদেশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে হিমেল হাওয়া আর কুয়াশার দাপটে জবুথবু জনজীবন। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত নিবারণে অনেকেই ছুটছে হকার্স মার্কেটের শীতবস্ত্রের দোকানে।
ঠাকুরগাঁও পুরাতন গরম কাপড় বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মেছের আলী বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুমে এই হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকান বসানোর জায়গা পান না। এখানে স্থায়ীভাবে একটি মার্কেট নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নূর কুতুবুল আলম জানান, এই জেলায় শীতকে দুর্যোগ হিসেবে দেখা হয়। তাই জনস্বার্থে জেলায় স্থায়ীভাবে শীতবস্ত্র বিক্রির মার্কেট করার বিষয়ে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। আর অনুমতি পেলে দ্রুতই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)- মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ।
গতকাল সকালে শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। শীতার্তদের মাঝে নানা পেশার সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ নেই।
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা)- উত্তরের হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীতে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গাঢ় কুয়াশার কারণে গতকাল এখানে সূর্যের দেখা মেলেনি। দুর্ভোগে পড়েছে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ২০,২০১৯)