শীতে ৫০ দিনে ৪৯ জনের মৃত্যু
![](https://bangla.thereport24.com/article_images/2019/12/23/2.jpg)
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শীতে কাঁপছে দেশ। এসময়ে সারাদেশে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়রিয়া এবং শীতের অন্যান্য অসুখ অর্থাৎ জণ্ডিস, চোখের প্রদাহ, আমাশয়, চর্মরোগ এবং জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী,গত ১ নভেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০ দিনে বিভিন্ন রোগে মারা গেছেন ৪৯ জন।
কন্ট্রোল রুমের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৫০ দিনে ঢাকা বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫৬২ জন, ডায়রিয়া ২২ হাজার ৬৪৩ জন, অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হন ১২ হাজার ৫৬৫ জন। এরমধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে একজন এবং অন্যান্য অসুস্থতায় চার জন মারা গেছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় গত এক নভেম্বর থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ছয় হাজার ৪৭৮ জন, ডায়রিয়ায় ১৭ হাজার ২১১ জন, অন্যান্য অসুস্থতায় ৪৮ হাজার ২৭১ জন। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে মারা গেছেন ১১ জন, ডায়রিয়াতে তিন জন এবং অন্যান্য অসুস্থায় আট জন মারা যান।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় গত এক নভেম্বর থেকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬০০ জন। এছাড়া, ডায়রিয়ায় ৯ হাজার ৯৩১ জন এবং অন্যান্য অসুস্থতায় আট হাজার ৯৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এবিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। আর অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ৫০ দিনে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে তিন হাজার ৪৩৩ জন, ডায়রিয়ায় আট হাজার ৯৫৬ জন, আর অন্যান্য অসুস্থতায় চার হাজার ৯৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে দু’জন, ডায়রিয়াতে একজন এবং অন্যান্য অসুখে ১০ জন মারা গেছেন।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এক নভেম্বর থেকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ছয় হাজার ৪৫৩ জন, ডায়রিয়াতে ১৭ হাজার ৮৮৪ জন, আর অন্যান্য অসুস্থতায় ১৭ হাজার ৫৯৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
বরিশালের ছয় জেলাতে এক নভেম্বর থেকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে এক হাজার ২৬৯ জন, ডায়রিয়ায় পাঁচ হাজার ২৬৪ জন, আর অন্যান্য অসুখে পাঁচ হাজার ৭৮৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে একজন এবং অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে চার জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে, এক নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৩২১ জন। এছাড়া, ডায়রিয়ায় আট হাজার ৯৪০ জন এবং অন্যান্য অসুখে তিন হাজার ৯৯০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে, গত ৫০ দিনে দেশের আট জেলায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে মোট ৩৯ হাজার ৭৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৯১২ জন। আর অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ছয় হাজার ৫৭৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ১৬ জন, ডায়রিয়ায় চার জন এবং অন্যান্য অসুখে ২৯ জন।
কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘দেশের ৬৪ জেলার সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্যানুসারে এই হিসাব করা হয়েছে। এতে রাজধানী ঢাকা শহরের কোনও সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য নেই। তবে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালেও এ সময়ে (গত ৫০ দিনে) অসুখে আক্রান্ত হয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।’ শীতের অসুখে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এত বেশি যে, শিশু হাসপাতালে সংকুলান হচ্ছে না। শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও শিশু মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪ দিন আগেও প্রতিদিন রোগী হতো ১৫০ থেকে ২০০ জন। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর রোগী আসছে ২৫০ থেকে ৩০০ জন। আবার বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন হলেও এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন।
ডা. আয়শা বলেন, ‘শীতের সময়ে শিশুদের নিউমোনিয়া এবং হাঁপানির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধরাও এর বাইরে নন।’
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এ সময়ে শীতের প্রকোপ থেকে শিশুদের রক্ষা করার পাশাপাশি বৃদ্ধদের প্রতিও সমান দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ, শিশু এবং বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। আবার এই সময়ে জ্বর, ঠাণ্ডা বা কাশি হলেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না— এটা যেমন রোগীদের মনে রাখতে হবে, তেমনই চিকিৎসকদেরও মনে রাখতে হবে।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ২৩,২০১৯)