দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন।চলছে জমজমাট প্রচারণা। প্রচার-প্রচারণায় দিনরাত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। দিন যতোই এগিয়ে আসছে নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীদের গণসংযোগ বেড়েই চলছে। পোস্টারিং, পথ সভা, লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং করেও চলছে নির্বাচনী প্রচারণা।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রচারকে সামনে রেখে নিজ নিজ কৌশল প্রণয়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

১০ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন, ২৮ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত তারা প্রচারণা চালাতে পারবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস শনিবার যাত্রাবাড়ি থানার ৫১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।পরে তিনি সিটির ৬০, ৬১, ৬২ নম্বর ওয়ার্ড হয়ে ৪৮ ও ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে প্রচারণায় অংশ নেন।

প্রচারণাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে টনি টাওয়ারের সামনে এক নির্বাচনী পথসভায় আগামীতে ঢাকা উন্নত বাংলাদেশের আরো উন্নত রাজধানীতে পরিণত হবে উল্লেখ করে ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের যে রূপরেখা প্রদান করেছি তা ঢাকাবাসী সাদরে গ্রহণ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার কাজে আমরা যেখানেই যাচ্ছি অভূতপূর্ব ও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। আমাদের প্রাণের ঢাকাকে সবাই ভালবাসি। আগামী ৩০ জানুয়ারি উন্নত ঢাকা গড়তে আমিসহ রাজধানীবাসী আওয়ামী লীগ মনোনীত কমিশনারদের তাদের সেবক হিসেবে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করি।’

তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ আমরা নির্বাচিত হতে পারলে আগামী ৫ বছর ঢাকাবাসী সব নাগরিক সুবিধা পাবেন। সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনার আওতায় সততা, নিষ্ঠা একাগ্রতা ও আন্তরিকতার সাথে রাজধানীবাসীর সেবা করে যাব। ২০৪১ সাল নাগাদ ঢাকাকে আমরা উন্নত ঢাকায় পরিণত করবো। উন্নত বাংলাদেশের উন্নত রাজধানী হবে ঢাকা।’

এদিকে এই সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও প্রচারণা করছেন। বংশাল এলাকায় গিয়ে দিনের প্রচারণা শেষ করার কথা রয়েছে তার।

সদরঘাটে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সামনে প্রচারণাকালে তিনি নির্বাচিত হলে ঢাকা শহরকে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা দূষণমুক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেবো, রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখবো। নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করবো।’

ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম রাজধানীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে কচুক্ষেত বাজারের স্বাধীনতা চত্বরে নবম দিনের মতো নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ চালান।

এ সময় এক পথসভায় তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে নৌকাকে বিজয়ী করে আমরা ঘরে ফিরবো।’

তিনি বলেন, নৌকাকে বিজয়ী করলে ঢাকাকে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা হবে। সবাই মিলে সুস্থ সচল আধুনিক ঢাকা করবো।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা হলো উন্নয়নের সরকার। নৌকা মানে বঙ্গবন্ধু- নৌকা মানে আওয়ামী লীগ এবং নৌকা হলো শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। তাই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আমাকে মেয়র হিসেবে আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোট দিয়ে বিজয়ী করুন।’

তিনি বলেন, ডিএনসিসি’র প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের করা বাস ফ্র্যাঞ্চাইজি চালুর বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যাগ নেবো। তার করা ইউলুপ প্রকল্পের কাজ বন্ধ আছে। এটিও এ বছরের মধ্যে চালু করা হবে। নির্বাচিত হলে রাজধানীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কঁচুক্ষেত বাজারে জনসাধারণের জন্য যাত্রী ছাউনি গড়ে তোলা হবে।

রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকায় গণসংযোগকালে উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহবান জানান।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৩ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এদের মধ্যে দক্ষিণে সাত জন ও উত্তরে ছয় জন রয়েছেন। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম (নৌকা), বিএনপির তাবিথ আউয়াল (ধানের শীষ), কমিউনিস্ট পার্টির ডা. সাজেদুল হক রুবেল (কাস্তে), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) শাহিন খান (বাঘ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মোহাম্মদ ফজলে বারী মাসুদ (হাতপাখা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুল হক দুলাল (আম)।

দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস (নৌকা), বিএনপির ইশরাক হোসেন (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের আবদুর রহমান (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহার (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতার-উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা (ডাব) ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন (মাছ)।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জানুয়ারি ১৮,২০২০)