‘আইসিজের রায়ে শুধু রোহিঙ্গা নয়, বাংলাদেশেরও বিজয় হয়েছে’
কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের শেষে বিশেষ দোয়া মাহফিলে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছে রোহিঙ্গারা। নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের পক্ষে রায় হওয়ায় এই বিশেষ দোয়া করা হয়। এসময় বলা হয়, এই রায়ে শুধু রোহিঙ্গাদের নয়, বাংলাদেশ ও গাম্বিয়ার বিজয় হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা। এসময় গাম্বিয়া ও বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারা।
বাংলাদেশ ও গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলপম্যান্ট কমিটির সভাপতি মোহামদ আলম বলেন, ‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজে’র দেওয়া রায়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। এই রায়ে শুকরিয়া জানিয়ে শিবিরের মসজিদে-মসজিদে বিশেষ দোয়া-মাহফিল হয়েছে। এতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যেন রোহিঙ্গা ও তাদের স্বজনদের হত্যার সুবিচার হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও গাম্বিয়ার সরকার ও জনগণের জন্য দোয়া করা হয়।’
রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, ‘কোনও কর্মসূচি পালনে অনুমতি না পাওয়ায় শিবিরের প্রত্যেক মসজিদ ও মাদ্রাসায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে শুক্রবার জুমা নামাজের পর উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, টেকনাফের শালবন, নয়াপাড়া, জামিদুরা ও লেদাসহ বেশকিছু ক্যাম্পের মসজিদ, স্কুল ও মাদ্রাসায় বিশেষ দোয়া মাহফিল হয়। এতে শত শত রোহিঙ্গা নাগরিক অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তারা রাখাইনে হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করলে জীবন বাঁচাতে নতুন করে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া।
বৃহস্পতিবার আইসিজে-র বিচারক রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ঘোষণা করেন। এগুলো হলো: ১. রোহিঙ্গাদের হত্যা, মানসিক ও শারীরিক নিপীড়ন ও ইচ্ছাকৃত আঘাত করা যাবে না। ২. গণহত্যার আলামত নষ্ট করা যাবে না। ৩. গণহত্যা কিংবা গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ। ৪. মিয়ানমারকে অবশ্যই চার মাসের মধ্যে লিখিত জমা দিতে হবে, তারা সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপর প্রতি ৬ মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দিতে হবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জানুয়ারি ২৪,২০২০)