গুজবকে মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশে ফিরেছেন রিং সাইনের এমডি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বেশ কিছু দিন ধরেই গুজব ছিলো পুঁজিবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তিনি আর কোনদিন দেশে ফিরবেন না এবং রিং সাইন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এসব গুজব উড়িয়ে দিয়ে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দেশে ফিরেছেন সুং ওয়ে মিন । বৃহস্পতিবার কাজে যোগদান করেছেন। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এর আগে ৯ জানুয়ারি এমডিসহ ৩ পরিচালক নিজেদের দেশে যান। এরা হলেন- ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন এবং পরিচালক ও এমডির বোন সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা এবং পরিচালক ও এমডির মামী হাসিয়ো লিউ ই চাই। এমডির শ্বাশুড়ি মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে তারা নিজ দেশে যান। তবে এর মধ্যেই চীনে নববর্ষ পালিত হওয়ার কারণে তারা কিছুদিন বেশি সময় নিজের দেশে অবস্থান করেন। কিন্তু একটি মহল এটাকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ নিয়ে নিজ দেশে চলে গেছেন বলে গুজব ছড়ায়। এই গুজবকে সত্য বিবেচনায় নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক ২৯ জানুয়ারি সংখ্যার শেষ পাতায় একটি নিউজও প্রকাশ করে। পরের দিন ৩০ জানুয়ারি পত্রিকাটি সেই নিউজের প্রতিবাদও প্রকাশ করে।
এমন গুজবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোম্পানিটি সর্ম্পর্কে আতঙ্ক তৈরী হয়। অথচ আইপিও’র অর্থের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই এবং কোম্পানিটির ব্যাংক একাউন্টেই ওই অর্থ রয়েছে। এছাড়া এমডি কাজেও যোগদান করেছেন। এরমাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন রিং সাইন কর্তৃপক্ষ।
এভাবে একটি বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত নিউজ প্রকাশ করা হলে বাংলাদেশে বিদেশী
বিনিয়োগের যে প্রবাহ তৈরি হয়েছে তাতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে মনে করে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
কোম্পানির এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম এমডি পারিবারিক কাজে নিজ দেশে গিয়েছেন এবং তিনি গতকাল ফিরেও এসেছেন। এখানে তাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসা। এটা ফেলে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু একটি মহল এমডির নিজ দেশে ফেরা নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়ায়। এমনকি রিং সাইনের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা
(সিএফও) মাহফুজুর রহমান হলেও আরেকজনের নাম ব্যবহার করে মহলটি মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। বিষয়গুলো খুবই দুঃখজনক।
রিং সাইন কর্তৃপক্ষ একাধিক ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করে। তবে সম্প্রতি একটি ব্যাংকের শীর্ষ পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের একাউন্টে থাকা আইপিও ফান্ডের টাকা নিজেদের ব্যাংকে স্থানান্তর করতে বলেন। একইসঙ্গে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি কার্যক্রম পরিচালনা করতে রিং সাইন কর্তৃপক্ষকে হূমকি দেন।
কিন্তু রিং সাইনের পর্ষদ অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। এমন সিদ্ধান্তে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রিং সাইনের বিদেশী পরিচালকদের সরাসরি হূমকি দিয়েছে। এতে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েন রিং সাইনের বিদেশী পরিচালকেরা।
গত ১০-১২ দিন ধরে রিং সাইনের আইপিও ফান্ড আত্মসাৎ নিয়ে শেয়ারবাজারে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে কোম্পানিটির বিদেশী পরিচালকেরা আইপিওতে উত্তোলিত ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন বলে প্রচারণা জোর গুজবে পরিণত হয়। বলা হয় পরিচালকরা আর দেশে ফিরবেন না। এমন খবরে
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রিং সাইন নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়। কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ রাখা, না রাখা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা।
রিং সাইনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির আইপিও ফান্ডেরজন্য ব্র্যাক ব্যাংকে ৪টি হিসাব( একাউন্ট) রয়েছে। এরমধ্যে আইপিওতে বাংলাদেশীদের আবেদনের জন্য ১টি, বিদেশীদের মধ্যে ডলারের জন্য ১টি, ইউরোর জন্য ১টি এবং পাউন্ডের জন্য ১টি হিসাব।
ব্যাংক হিসাব অনুযায়ি, রিং সাইনের আইপিও ফান্ডের ৪ টি একাউন্টে ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ও আইপিওবাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ব্যাংকে আইপিও ফান্ড রাখায় সুদজনিত ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার আয় হয়েছে।
আইপিও একাউন্টের ৪টির মধ্যে বাংলাদেশীদের জন্য ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৩ নম্বর ব্যাংক একাউন্টে ৮২ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৪ নম্বর একাউন্টে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ডলার বা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৫ নম্বর একাউন্টে ৬ হাজার ৮৪২ পাউন্ড বা ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৬ নম্বর একাউন্টে ২ হাজার ৭০৭ ইউরো বা ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রয়েছে। অর্থাৎ রিং সাইনের আইপিও ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে।
রিং শাইন টেক্সটাইল শেয়ারবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এরমধ্যে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ অনুযায়ি, ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। যা দিয়ে ঢাকা ব্যাংকের ২৮ কোটি টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। আইপিওতে ডিএসইর ফি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয় করা হবে। যা ক্রয়ে সময়সীমা রয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জানুয়ারি ৩০,২০২০)