দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে চীনের নভেল করোনাভাইরাস। এটি শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, বাণিজ্য ক্ষেত্রেও সৃষ্টি করেছে জটিলতা। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাবে দেশটির অধিকাংশ কারখানা ও অফিস কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। এর প্রভাবে তাদের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে। যা বহির্বিশ্বে বাণিজ্য সম্পর্কে সঙ্কট তৈরি করছে।

এর মধ্যে মুসলিম বিশ্বে আগামী মে মাসে শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। এর পরেই বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল ফিতর। এ উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্য ও পোশাক সামগ্রীর বড় বাণিজ্য হয় চীনদেশ থেকে। যা এ বছর অনেকটা অনিশ্চিত। ফলে বাণিজ্য জটিলতার আশঙ্কায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা।

আর করোনাভাইরাসকে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির বড় হুমকি মনে করা হলেও এর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে কতটুকু হবে তা এত অল্প সময়ে নির্ণয় করা কঠিন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে, এর প্রভাব চীনের অর্থনীতিতে অনেক বড় ধাক্কা আসবে বলে নিশ্চিত করেছেন গ্রেটার চায়না গবেষণার প্রতিষ্ঠান ওসিবিসি’র প্রধান টমি জাই।

এদিকে সংক্রমক ভাইরাসের ফলে উন্নত দেশের পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ সংযত রাখতে শুরু করেছে। স্থল পথের পাশাপাশি, আকাশ ও নৌ যোগাযোগে দেওয়া হচ্ছে কড়াকড়ি। অনেক দেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আপাতত স্থগিত রেখে নতুন বাজারের সন্ধান শুরু করেছে।

বর্তমানে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এক হাজার ৪৬৮ কোটি ২৩ লাথ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে চায়নায় রপ্তানি হচ্ছে মাত্র ৮৩ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, আর চায়না থেকে আমদানি হচ্ছে আমদানি হচ্ছে এক হাজার ৩৮৫ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। এ হিসেবে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এক হাজার ৩০১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারের। তথ্য এফবিসিসিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

চায়না থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় : তৈরি পোশাক, নীটওয়্যার, পাট এবং পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, জুতা, হোম টেক্সটাইল, চশমা, ফটোগ্রাফি চন্ত্র, মাল্টিমিডিয়া যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, ফার্নিচার ও পরিবারে ব্যবহৃত সামগ্রী, ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রাংশ, কাঠ ও কাঠ কয়লা। এছাড়া কাগজ ও কাগজের বোর্ড, বিভিন্ন তৈরি পণ্য, তুলা, কার্পেট এবং অন্যান্য টেক্সটাইল সামগ্রী, মূল্যবান ধাতু, ব্যাগ ও হাত ব্যাগ, ওষুধ শিল্প পণ্য, খেলনা সামগ্রী, পুতুল, হস্তশিল্প, রাবার ও রাবার জাতীয় পদার্থ, গ্লাস ও গ্লাস উৎপাদন সামগ্রী।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আসন্ন গরমের মৌসুম, রমজান ও ঈদকেন্দ্রীক চীনের সঙ্গে বাণিজ্য করার সময় এখনি। আর এসময় শুরু হয়েছে জটিলতা।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের ইলেট্রিক, ইলেকট্রনিক্স এবং তৈরি পোশাক, পাদুকা ও প্রসাধনীসহ অন্যান্য বাজারে শুরু হয়েছে অস্থিরতা।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পলওয়েল সুপার মার্কেট, ফুলবাড়িয়া ইলেকটিক ও স্টেডিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য চায়নাকেন্দ্রীক হওয়ায় তা এ বছর বড় সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে। সময় মতো ক্রয় আদেশ (এলসি) এবং পণ্য জাহাজীকরণ আদেশ (চালান) সম্পদন করতে না পারলে মৌসুমী ব্যবসায় বড় ধরনের আঘাত আসবে। যা কাটিয়ে উঠতে পারবে না অনেক ব্যবসায়ী। এক্ষেত্রে ভারত কিছুটা লাভবান হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

চায়না থেকে তৈরি পোশাক আমদানিকারক আবদুল আজিজ আগামী নিউজকে জানান, জানুয়ারি ১৬ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ চীনের নববর্ষের পূর্বে যেসব ক্রয়আদেশ হয়েছে তা আসতে বাধা হবে না। কিন্তু আগামী রমজান ও ঈদের জন্য যে এলসি করা হবে তা সঠিক সময়ে আসবে কী-না তা এখন বড় চিন্তার।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতিটি আমদানি আদেশ সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে গড়ে আড়াই থেকে তিন মাস। এর মধ্যে এলসি পরবর্তী সময়ে চীনে যাওয়া আসা ভিসা প্রসেসিং, চীনে যাওয়া ও পছন্দের পণ্য ক্রয় করা। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন এক সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় লাগে। এছাড়া কন্টেইনারে বোঝাই করার পর বাংলাদেশের বন্দরে আসতে ১৫ দিন থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বন্ধরের পণ্য খালাসের সময় ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ০৫,২০২০)