একক ৮৪ কোটি টাকার মুনাফা, সমন্বিতভাবে লোকসান ৭০ কোটি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: গত কয়েক বছর ধরে অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (এসিআই) মুনাফার উত্থানের পথে কাটা হয়ে রয়েছে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির লোকসান। তবে এবার সেই কাটা আরেক ধাপ এগিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ১৯) এসিআইয়ের মুনাফাকে লোকসানে নামিয়েছে। এবার ৮ শতাংশ বিক্রি বৃদ্ধি সত্ত্বেও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয় ও সুদজনিত ব্যয় বৃদ্ধিতে এসিআইয়ের সমন্বিত হিসাবে এই পতন হয়েছে।
পরিচালন ব্যয় ও সুদজনিত ব্যয় বৃদ্ধিতে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ১৮) অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (এসিআই) সমন্বিত হিসাবের ব্যবসায় ধস নেমেছে। আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধের তুলনায় ১৭ শতাংশ পরিচালন ব্যয় এবং ৪২ শতাংশ সুদজিনত ব্যয় বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির ব্যবসায় পতন হয়েছে ২৭০১২ শতাংশ।
এসিআইয়ের এককভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে নিট মুনাফা হয়েছে ৮৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ১৪.৬০ টাকা। তবে ১৪টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিসহ সমন্বিত হিসাবে নিট লোকসান হয়েছে ৬৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় বা শেয়ারপ্রতি ১২.২০ টাকায়। গত কয়েক বছর ধরে এসিআইয়ের ব্যবসায় সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর এমন নেতিবাচক প্রভাব আধিপাত্য বিস্তার করে রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে রিটেইল সুপারশপ স্বপ্ন ব্র্যান্ডের এসিআই লজিস্টিকস।
এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর ১৭) প্রথমার্ধে এসিআইয়ের সমন্বিতভাবে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৭.৭২ টাকা। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধে কমে হয় ২৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.০৫ টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে হয়েছে ৬৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বড় লোকসান। যার পেছনে প্রধান কারন হিসাবে রয়েছে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর সুদজনিত ব্যয় এবং পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি।
দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সমন্বিত হিসাবে পরিচালন ব্যয় হয়েছে ৮২৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একইসময়ে হয়েছিল ৭০৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির পরিচালন ব্যয় বেড়েছে ১১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ১৭ শতাংশ। এছাড়া আগের অর্থবছরের একইসময়ের ১৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকার সুদজনিত ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২২২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির সুদজনিত ব্যয় বেড়েছে ৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ৪২ শতাংশ। এই পরিচালন ব্যয় এবং সুদজনিত ব্যয়ের উত্থান কোম্পানিটিকে লোকসানে নামিয়েছে। অথচ ২২২ কোটি ৯২ লাখ টাকার সুদজনিত ব্যয়ের মধ্যে এসিআইয়ের এককভাবে ব্যয় মাত্র ৩৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
এসিআইয়ের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোসহ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোট ঋণের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ৪ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের ৩১ ডিসেম্বর ছিল ৪ হাজার ১৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩৯৬ কোটি ২২ লাখ টাকা বা ১০ শতাংশ। এই ৪ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকার মধ্যে এসিআইয়ের এককভাবে ১ হাজার ৮৫৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।
সমন্বিতভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে এসিআইয়ের ২৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বা ৮ শতাংশ বিক্রয় বেড়েছে। আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধের ৩ হাজার ৮৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার বিক্রয় এ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এই বিক্রয় বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির গ্রোস প্রফিট বেড়েছে ৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা বা ৯ শতাংশ। যা কোম্পানিটির লোকসান ঠেকাতে পারেনি।
এসিআইয়ের ১৪টি অধীনস্থ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে - এসিআই ফরমুলেশন, এসিআই সল্ট, এসিআই ফুডস, এসিআই পিউর ফ্লাওয়ার, এসিআই অ্যাগ্রোলিঙ্ক, ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন, এসিআই মটরস, প্রিমিয়াফ্রেক্স প্লাস্টিকস, এসিআই লজিস্টিকস (স্বপ্ন), এসিআই হেলথকেয়ার, এসিআই এডিবল ওয়েলস, এসিআই কেমিক্যালস, ইনফোলিটক্স বাংলাদেশ ও এসিআই বায়োটেক।
ব্যবসায় পতনের বিষয়ে এসিআই কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছে, পরিচালন ব্যয় ও সুদজনিত ব্যয় বৃদ্ধিতে লোকসান হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ০৬,২০২০)