‘গণতন্ত্র আইসিউইতে যাওয়ার অবস্থা’
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস। বাংলাদেশের রাজনীতির লড়াই, সংগ্রাম ও ইতিহাসের বিজয় লাভের পথসিঁড়ি। স্বৈরাচারি শাসকের পতন ত্বরান্বিত করে নূর হোসের আত্মাহুতি।
১৯৮৭ সাল। তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন নূর হোসেন। তাঁর আত্মাহুতি আন্দোলনে দিয়েছিল নতুন গতি। তৎকালীন প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা, তরুন-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ও রাজনীতিকরা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে তীব্রতার করে তোলে। আন্দোলনের দাবানলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।
এরপর থেকে নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা এই শ্লোগান ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রতীক। সেই একই দিনে ঘাতকের গুলিতে আরো দুজন প্রাণ হারান। একজন হলেন যুবলীগ কর্মী নূরুল হুদা ও কিশোরগঞ্জ বাজিতপুরের ক্ষেত মজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো।
সেই আন্দোলনের এতগুলো বছর পরও প্রশ্ন, আমরা কী গণতন্ত্র পেয়েছি? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন ‘আজকে যে জটিল পরিস্থিতি হয়েছে এটা শুধু বাংলাদেশ নয় সারা দুনিয়া দেখছে। এমন অবস্থায় যদি বলি গণতন্ত্র খুব ভালোভাবে বিকশিত হয়েছে, সুসংহত হয়েছে তাহলে কীভাবে চলে। এটা এখন আইসিইউতে উঠার মত অবস্থা হয়ে গেছে। সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক এটা সবাই চাই কিন্তু আমরা খুব কঠিন একটা সময় পার করছি গণতন্ত্রের জন্য ।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘শহীদ নূর হোসেন বুকে পিঠে যে কথা লিখেছিলো স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তিপাক যে আত্মদান করেছিলো সে আকাঙ্খার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিগত দিনে দুইটি দল দেশ পরিচালনা করেছে এবং করে চলেছে। ফলে নূর হোসেনের আত্মদানের সাথে এ দেশের শাসন পরিচালনার সঙ্গতি নাই। যে কারণে আজকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না গণতান্ত্রিক শাসন তো দূরে থাক। স্বৈরাচার নিপাতের কথা বলে এরা অনির্বাচিত স্বৈরাচারের জায়গায় নির্বাচিত স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছে। গণতন্ত্রকে এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে জনগণের ইচ্ছানুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরের অবস্থাও তাদের নেই। ফলে পরিস্কার বোঝা যায় এরা নূর হোসেনের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘আমরা ৯০ এর গণতান্ত্রিক শাসন ও সংসদীয় গণতন্ত্র পেলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আমরা গণতন্ত্র এনেছি তাদের নিয়েই বর্তমান ক্ষমতাসীনরা সরকার গঠন করেছে। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী ও বাংলাদেশের বিরোধীতাকারীদের নিয়ে বিএনপি জোট গঠন করছে। তাই বর্তমানে গণতন্ত্র নিরাপাদ নয়।’
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়কারী ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘আমরা সামরিক স্বৈরশাসনকে বিদায় জানালেও দেশে এখন গণতান্ত্রিক স্বৈরশাসন চেপে বসেছে। দেশের প্রধান দুই দলই ৯০ এর ৩ দলের রূপরেখার সঙ্গে বেঈমানি করে স্বৈরচারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আসলে নির্বাচন গণতন্ত্রের শেষ কথা নয়। দেশে নির্বাচনের নামে এখন ব্যক্তির স্বৈরশাসন চলছে। ফলে নূর হোসেনের আত্মত্যাগ এখন দুই দলের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।’
(দিরিপোর্ট২৪/এএ/এমসি/নভেম্বর ১০, ২০১৩)