দৌড়াতে কষ্ট হয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের ফিল্ডিং থাকে আক্রমণাত্মক। বাউন্ডারি লাইনের তুলনায় ত্রিশ গজের মধ্যেই মনোযোগ থাকে ফিল্ডিংয়ে থাকা অধিনায়কের। তাই লাল বলের ক্রিকেটে দৌড়ে রান নেয়ার থেকেও সহজ বাউন্ডারি নেয়া। অবশ্য এই বাউন্ডারি মারার ফাঁদে পা দিয়েই বোলাররা তুলে নেয় উইকেট। সেই ফাঁদে পড়তেই ভালো লাগে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দেয়ায় ফলাফল বইতে হয় দলকে। আর দলে বিশ্বমানের বোলার না থাকায় তাঁদের জন্যে কাজটা হয়ে যায় অসম্ভব।
ফলে বেশিরভাগ টেস্টেই বাংলাদেশকে বরন করতে হয় ইনিংস ব্যবধানের পরাজয়। যেখানে বোলাররা বল করার সুযোগই পায় মাত্র একবার। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট থেকে ছিটকে দেয় শুরুতেই। যার সবশেষ উদাহরণ পাকিস্তানের মাটিতে বর্তমানে চলমান রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট। যেখানে সবসময়ের মতো আবারও ব্যর্থ দেশের ব্যাটসমানরা। আর এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ দৌড়ে রান না নেয়ার মানসিকতা।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বিপর্যয়ের পরেও মিঠুনের ব্যাটে চড়ে মোটামুটি মানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। প্রথম দিনের পুরোটা পার করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৮২.৫ ওভার ব্যাট করলেও অলআউট হয়েছে ২৩৩ রানে। ওভারপ্রতি রানরেট ২.৮১। খেলা না দেখে শুধু এই রানরেট বিবেচনায় নিলে মনে হতেই পারে, বাংলাদেশ তো টেস্ট মেজাজেই ব্যাট করেছে। তবে এই ইনিংসেই লুকিয়ে আছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে প্রথম ইনিংসে চার–ছক্কা যথাক্রমে ৩৩ ও ১টি। বাউন্ডারি থেকে মোট রান এসেছে ১৩৮ আর অতিরিক্ত খাতে এসেছে ১০ রান। অর্থাৎ ৪৯২ বল খেলে বাংলাদেশ মাত্র ৮৫ রান নিয়েছে সিঙ্গেলস-ডাবলসে। উইকেটের ভেতরে দৌড়ানোর থেকে অল্প কষ্টে চার বের করাতেই ব্যাটসম্যানদের মনোযোগ ছিল বেশি।
উইকেটের ভেতরে দৌড়ে রান নেয়ার অনীহা শুধু এই চলতি টেস্টে নয়। সর্বশেষ ভারত সফরের কথা তুলে ধরলে আরও ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে। যেখানে খেলা দুই টেস্টের একটিতেও বাংলাদেশ খেলতে পারেনি তিনদিনের বেশি। ইনিংস ব্যবধানের দুটি পরাজয়ে দলীয় সংগ্রহ ছিল লজ্জাজনক।
ইডেন গার্ডেনস টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সে ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে এসেছে ৬৮ রান, অতিরিক্ত থেকে ১৪ মিলিয়ে মোট ৮২। সিঙ্গেলস–ডাবলস থেকে মাত্র ২৪! সে টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১১৮ রানই বাউন্ডারি থেকে। সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ২২ যোগ করলে ১৪০। সিঙ্গেলস–ডাবল থেকে মাত্র ৫৫
ইন্দোর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। বাউন্ডারি থেকে এসেছে ৭৮ অতিরিক্ত আরও ৪। মোট ৮২ রান। বাকি ৬৮ রান সিঙ্গেলস–ডাবলস থেকে। দ্বিতীয় ইনিংসে উঠেছে ২১৩ রান। বাউন্ডারি থেকে এসেছে ১১৮ রান সঙ্গে অতিরিক্ত ১৩ রান যোগ করলে হয় ১৩১। সিঙ্গেলস–ডাবলস থেকে ৮২।
অর্থাৎ রঙিন কিংবা সাদা পোশাক- বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটে যে ভয়াবহরকম অনীহা কাজ করে সেটা প্রকাশ্য। যার ফলাফল হিসেবে ভুগতে হয় টি-টুয়েন্টিতেও। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে তাই প্রায় পুরো দিন খেলেও স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৩৩ তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। যদিও নিকট অতীতে এই রানটাই তো অনেক কিছু।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ০৮,২০২০)