খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বাধা দুই মামলা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুদকের জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের এই দিনে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
রায় ঘোষণার পর জামিনে থাকা সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর জামিন বাতিল করে সাজা পরোয়ানা দিয়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত থেকেই নাজিম উদ্দিন রোডস্থ পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি তার গৃহকর্মী ফাতেমাকে নিয়ে কারাগারেই আছেন। আজ খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে।
এদিকে কারাগারে থাকাবস্থায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের আরেক মামলায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমানের এ সহধর্মিনীর ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেয় একই আদালত।
দণ্ড হওয়া দুই মামলায় জামিন পেলেই তিনি কারামুক্ত হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তার নিম্ন আদালতের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ।
তিনি বলেন, বর্তমানে মামলা দু’টির মধ্যে একটি হাইকোর্টে এবং আরেকটি আপিল বিভাগে পেন্ডিং রয়েছে। এছাড়া বাকি ৩৪টি মামলা খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, খালেদা জিয়া সাংবিধানিক ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। তিনি দুই বারের প্রধানমন্ত্রী। এটা বাদ দিয়েও যদি আইনের ভাষায় বলি, একজন বয়স্ক মানুষ শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিন পাওয়ার আইনগত অধিকার আছে। মূলত মামলা দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে চিরতরে শেষ করার ষড়যন্ত্র চলছে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসার নামে হাসপাতালে আটক করে রাখা হয়েছে। এদিকে বিএনপির নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। সরকার এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে জামিনের জন্য বার বার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটা হয়নি। বিএনপি যেদিন সত্যিকারের একটি বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে সেইদিন খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন।
মেজবাহ বলেন, এদেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এবং জনগণের পক্ষ কথা বলার জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি অন্তত জরুরি। খালেদা জিয়াকে আটক রেখে জনসাধারণের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে সরকার।
এদিকে দণ্ডিত হওয়া দুইটি মামলার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর আপিলে হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। ফলে দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার পক্ষে বর্তমানে আপিল বিভাগে আপিল বিচারাধীন আছে।
অন্যদিকে চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের দুর্নীতির মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল বিচারাধীন আছে।
বর্তমানে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা চার্জ শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। ড্যান্ডি ডাইং মামলাটিও স্থগিত রয়েছে।
অন্যদিকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সহিংসতা, নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে আরো কমপক্ষে ৩০টি মামলা রয়েছে।
মামলাগুলো ২০১৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। মূলত রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে এসব মামলা হয়। পুলিশ, সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও আইনজীবীরা ওইসব মামলা করেছেন। তার মধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে ঢাকায়। কুমিল্লায় তিনটি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা।
ঢাকার মামলাগুলোর মধ্যে হত্যা ও নাশকতার ১৩টি মামলা। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপিসহ ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় বাসে আগুন, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় ১০টি মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। যার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানায় ২টি ও দারুস সালাম থানায় ৮টি মামলা। এছাড়া ঢাকার অপর মামলাগুলোর মধ্যে ভুয়া জন্মদিন পালন, ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্যের জন্য মানহানির মামলা এবং ২০১৫ সালে গুলশানে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে পেট্রোলবোমা হামলার মামলা উল্লেখযোগ্য।
কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয়েছে তিন বার। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল হাসপাতালে নেয়া হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে আবারো কারাগারে পাঠানো হয়। ৬ অক্টোবর তাকে আবারো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে ১ মাস ২ দিন পর তাকে ৮ নভেম্বর আবারো কারাগারে নেয়া হয়। ওইদিনই তাকে নাইকো দুর্নীতির মামলায় হাজির করা হয়। এরপর গত বছরের ১ এপ্রিল তাকে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হয়। সেই থেকে খালেদা জিয়া হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
এদিকে আগে খালেদা জিয়ার মামলাগুলো বকশী বাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ প্রাঙ্গনে অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে চলত। এখন মামলাগুলোর বিচার চলছে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ০৮,২০২০)