ফখরুলের সঙ্গে কথা হয়েছে, চাইলে প্রমাণ দেবো: কাদের
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করেননি বলে মির্জা ফখরুল যে দাবি করেছেন সেটিকে অসত্য বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল তাকে ফোন করেছিলেন, চাইলে তিনি প্রমাণও দিতে পারবেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দুপুর ১২ টায় আওয়ামী লীগ খুলনা বিভাগীয় যৌথসভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল আমাকে ফোন করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে অনুরোধ করেছেন। এর প্রমাণ আছে। চাইলেই দিতে পারি। রাজনীতিতে এতো নিচে নামতে চাই না।
‘অসত্য কথা আমি কেন বলবো? তিনি (ফখরুল) আমাকে অনুরোধ করেছেন। এখন তিনি কি প্রমাণ করতে চান যে তিনি আমাকে অনুরোধ করেননি? তাহলে কিন্তু প্রমাণ দিয়ে দেবো। কারণ টেলিফোনে যে সংলাপ সেটি তো আর গোপন থাকবে না। এটা বের করা যাবে। ফোনে কথা বললে এটা কি গোপন রাখা যাবে? এটার রেকর্ড আছে না? আমি তাকে ছোট করতে চাই না। তিনি না কি এক জায়গায় বলেছেন আমাকে ফোন দেননি। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সেটির রেকর্ড আছে। আমি আর নিচে যেতে চাই না। উনি নিজেকে কেন নিচে নিয়ে যাচ্ছেন।’
খালেদা জিয়ার প্যারোলের জন্য আবেদন না করায় তার মুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত কারণগুলো বিবেচনার অবকাশ নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির চেয়ে তার দল ও পরিবার রাজনৈতিক ফায়দা তোলার দিকে বেশি নজর দিচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা প্যারোলের আবেদনই করেনি। কাজেই সেই নিয়মটি আছে কি না, যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ আছে কি না তাকে মুক্তি দেওয়ার, সেটা বিবেচনার কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু তারা কোনো আবেদন করেনি। প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সেসব কারণ প্রদর্শন করে এ পর্যন্ত তারা কোনো আবেদন করেনি।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপির ‘নাটক করছে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন করে তারা ক্ষান্ত হয়নি। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তারা ক্ষান্ত হয়নি। নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আজকে বেগম জিয়াকে কেন্দ্র করে তারা নতুন নতুন ইস্যু খোঁজার চেষ্টা করছে। আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে তারা সরকার হটানোর জন্য সরকারের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র করছে। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তারা আজকে নতুন নতুন নাটক করছে।’
‘তারা খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে যা করছে, তাদের মহাসচিব যা করছে; এটা আসলে তারা বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়ার চেয়েও তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে যতটা না ব্যাকুল তার চেয়ে ব্যাকুল রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপি নাটক করছে, রাজনীতি করে যাচ্ছে।’
বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা যেমন থাকার কথা তেমনই আছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব ঝানু রাজনৈতিক হতে পারেন, কিন্তু তিনি কি ঝানু চিকিৎসক যে, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা কি তিনি সেই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন? চিকিৎসকরা বলছেন, বেগম জিয়ার অবস্থা বার্ধক্যের কারণে যেই অবস্থানে থাকার কথা সেই অবস্থানে আছে। তরুণ-তরুণীর মতো শারীরিক অবস্থা তার নেই। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা যা থাকার তাই আছে। কোনো প্রকার অবনতি হচ্ছে না। শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসা তাকে দিচ্ছেন।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। বেগম জিয়ার মামলা দুর্নীতির মামলা। সরকার কিভাবে মুক্তি দেবে? যদি রাজনৈতিক মামলা হতো তাহলে রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তির প্রশ্ন ছিল। কিন্তু যেহেতু এই মামলা রাজনৈতিক নয়। এই মামলা দুর্নীতির মামলা আর এই মামলা এই সরকারও রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে হেয় করার জন্য রুজু করেছে এমন নয়। মামলা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই মামলা তিনি হাজিরা না দিতে দিতে গড়াতে গড়াতে তাদের নানান কারসাজি এই মামলার এই অবস্থায় এসেছে।’
এ সময় এপ্রিল থেকে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করার কথা জানিয়ে যেখানে কমিটি হয়ে গেছে সেসব জায়গায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তাগাদা দেন তিনি। একইসঙ্গে সুবিধাবাদীদের বিষয়ে নজর রাখার নির্দেশ দেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে প্রত্যেক নেতাকর্মীকে সততার আলোকে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার আহ্বান জানান।
‘দল বিতর্কিত হয় এমন কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। দলের মধ্যে বিভেদ জিইয়ে রেখে দলকে শক্তিশালী করা যাবে না। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা আছে। অনেক ক্ষেত্রেই নেতৃত্বের জন্য এই অবস্থা সৃষ্টি হয়। কে কতোটা শক্তিশালী এটা ভাবে। আগে ভাবতে হবে দলকে কতোটা শক্তিশালী প্রভাবশালী করা যায়।’
দলকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, নির্বাচনী ওয়াদা পালনে জনকল্যাণে কাজ করতে হবে। এজন্য দলকে শক্তিশালী করতে হবে। দল শক্তিশালী হলে সরকার শক্তিশালী হবে।
মুজিববর্ষের নামে চাঁদাবাজি যেন না হয় নেতাকর্মীদের সেকথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন মুজিববর্ষ উদযাপন করবেন। একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে। মুজিববর্ষ পালন করার নামে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না। নেত্রী স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন মুজিববর্ষের নামে যে তোড়জোর দেখছি চাঁদাবাজির দোকান যেনো না হয়। বঙ্গবন্ধুকে তাহলে আরও ছোট করা হবে। বঙ্গবন্ধুর ঔজ্জল্য বাড়াতে এসব চাঁদাবাজির দোকান খুলে বঙ্গবন্ধুর মহিমাকে বড় করা যাবে না।’
‘কাজেই এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি জেলায় জেলায় আপনারা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় কমিটির কর্মসূচি থাকবে। আমাদের দলেরও একটা কর্মসূচি থাকবে। দলীয় ও সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আপনাদের প্রোগ্রাম সাজাতে হবে। যেখানে সেখানে যত্রতত্র চাঁদাবাজি করে বঙ্গবন্ধুর নামে মুজিববর্ষের একটা দোকান খোলা হবে, এটা কেউ অ্যালাউ করবেন না। কোনো অবস্থা অনিয়ম বিশৃঙ্খলাকে মদদ দেয়া যাবে না। যারা এগুলো করবে তাদের তৎপরতা বন্ধ করে দিতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকসহ খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতারা।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ১৮,২০২০)