দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কারা হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার তাঁতী দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর একথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন সম্পূর্ণ তাঁর পরিবারের ব্যাপার। এ সিদ্ধান্ত বেগম জিয়া নিজে কিংবা তার পরিবারের সদস্যরাই নেবেন।’

দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পর কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কারা হেফাজতে তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

দুই বছর ধরে কারাবন্দি বিএনপি প্রধানের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে দাবি করে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা চেয়েছে তার পরিবার ও বিএনপি। বিএসএমএমইউর ভিসির কাছে আবেদন করে তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুপারিশ চেয়েছে পরিবার।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় ভালোই আছে। এরইমধ্যে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন খালেদার মুক্তি নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ফোনে মির্জা ফখরুল খালেদার মুক্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে বলেছেন বলে জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।



ওবায়দুল কাদেরের সেই বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো এ নিয়ে কিছু বলিনি। সেখানে তার এটা নিয়ে কথা বলা কতটা সঠিক হচ্ছে জানি না।’

আওয়ামী লীগের স্বার্থেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া উচিত এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা তো এখনো তার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কিছু বলিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। কবর জিয়ারত করেছি। পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে আমরা শপথ নিয়েছি যে, গণতন্ত্রের মাতা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের সংগ্রামকে অব্যাহত রাখবো। একইসঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের সংগ্রামকে আরও বেগবান করবো।’

দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে বিএনপি কী করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, তিনি জামিন যোগ্য, তিনি জামিন পেতে পারেন এবং পাওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু এ সরকার সম্পূর্ণ রাজনীতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে জামিন না দিয়ে কারাকারে বন্দি করে রেখেছে। আমরা এর জন্য আন্দোলন করছি। গত দুই বছর ধরেই আমরা আন্দোলনের মধ্য আছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের যে আকাঙ্খা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া সেই মুক্তি দিতে সরকার বাধ্য হবে। অবশ্যই জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারা এগিয়ে আসবে।’

বেগম জিয়ার প্যারোল কিংবা মুক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো কোনও প্যারোল নিয়ে কথা বলিনি। আমাদের দল থেকে আজ পর্যন্ত বলেছি কি? তো এটা নিয়ে কথা বলা কতটা সঠিক হয়েছে সেটা তিনি (ওবায়দুল কাদের) বিবেচনা করবেন।’

এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তার শরীরের যে অবস্থা তাতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেজন্য আমরা বলেছি যে, এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে কারাগারের মধ্যে। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া উচিত। কারণ এই দেশে সত্যিকার অর্থে যদি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হয় সেটা বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া হবে না।’

আইনি প্রক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির না হলে প্যারোলে আবেদনের কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ বেগম জিয়া ও তার পরিবারের ব্যাপার। তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম-আহ্বয়ক ড.কাজী মনিরুজ্জামান মনিরসহ তাঁতী দলের নেতাকর্মীরা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ১৮,২০২০)