শহীদ মিনারের মূলবেদি স্থানান্তর: পৌর মেয়রকে শোকজ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণের নামে নকশা বদল করে বিশেষ এক ব্যক্তির সুবিধার জন্য এর মূল বেদি ভেঙে তা এক কোণে সরিয়ে নির্মাণচেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টুর বিরুদ্ধে নালিশি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে জবাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী জজ (সদর) আদালতের বিচারক সুরাইয়া বেগম এ আদেশ দেন।
এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারটির বেদি যাতে ভাঙা না হয় সেজন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ওই আদালতে নালিশি আবেদন করেন লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক সৈয়দ সূফী মো. তাহেরুল ইসলাম।
আদালতের নাজির মো. নুরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শহীদ মিনারের পেছনের বহুতল ভবনটি সুমন খান নামে এক ব্যবসায়ীর। ওই ভবনে প্রবেশের কোনও রাস্তা নেই। স্থানীদের অভিযোগ ওই ব্যবসায়ীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য শহীদ মিনারটির বেদি স্থানান্তর করা হচ্ছে। এজন্য পুনর্নিমাণের সময় নকশাটিও প্রদর্শন করা হচ্ছে না।
জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, ‘ লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের নামে মূল নকশা পাল্টে এর বেদিটি সরিয়ে তা এক কোণে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এমন অভিযোগে নালিশি মামলাটি দায়ের হয়েছে। বাদীর দাবি, শহীদ মিনারের পেছনে বসবাসকারী স্থানীয় ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানকে রাস্তা বের করে দেওয়ার বিশেষ সুবিধা দিতে শহীদ বেদিটি সরানো হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টুকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
লালমনিরহাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক সৈয়দ সূফী মো. তাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার মেয়রকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তিনি কোনও জবাব দেননি। তাই সুবিচার প্রার্থনা করে ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করেছি। আশা করি আদালতের রায়ের মাধ্যমে লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যথাযোগ্য মর্যাদায় অক্ষত রাখা হবে।’
এদিকে, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুদিন পরেই শহীদ দিবস হওয়ায় মূল বেদিটি এখনও ভাঙা হয়নি। তবে মূল বেদির পেছনে উত্তর পাশে নতুন বেদির নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। নতুন বেদির নির্মাণ কাজ শেষ হলেই পুরানো বেদি ভেঙে ফেলা হবে। এবছর শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা যাবে কিনা তাও এখনও নিশ্চিত নয়।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, ওই বেদির সামনে শহীদ মিনারের ভেতরে একটি গাছ থাকায় শহীদ বেদীটি বাইরে থেকে দৃশ্যমান হবে না। ফলে ঐতিহ্যবাহী গাছটিও কেটে ফেলার শঙ্কা রয়েছে। তবে বেদিটি সরিয়ে নেওয়া হলে এর পেছন থেকে ব্যবসায়ী সুমন খানের রাস্তা ছাড়া বহুতল বাড়িটি দৃশ্যমান হবে এবং শহীদ মিনারের যে কোনও পাশ দিয়ে তার প্রবেশের জন্য রাস্তাও তৈরি করে দেওয়া হতে পারে।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেছেন, শহীদ মিনারটির নকশা বদল করা হলেও নতুন নকশাটি কোথাও প্রদর্শন করা হয়নি।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ১৯৭২ সালে লালমনিরহাট থানা রোডের বাহাদুর মোড়ে নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন পর লালমনিরহাট পৌরসভার অর্থায়নে গত ২০ জানুয়ারি এটির পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তবে এরই সুযোগ নিয়ে শহীদ মিনারের বেদীটি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন লালমনিরহাটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ১৯,২০২০)