বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখলেন নাঈম
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চার বোলার নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। দুই স্পিনারের মধ্যে নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলেছেন অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলাম। তার জায়গায় জিম্বাবুয়ের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী অফ স্পিনার নাঈম হাসান। জিম্বাবুয়ের ৬ উইকেটের ৪টিই নাঈমের দখলে। পুরো দিনেই নিষ্প্রভ ছিলেন তাইজুল। অন্যদিকে প্রথমদিন দুই পেসারই ভালো জায়গায় বল করেছে। জায়েদ নিয়েছেন দুই উইকেট। ইবাদত উইকেট না নিলেও বোলিংয়ে ছিল আঁটসাঁট। প্রথম দিনে বাংলাদেশের সাফল্যে তাদেরই সব অবদান। তাই ক্রেগ আর্ভিনের সেঞ্চুরির পরও জিম্বাবুয়ের শেষটা ভালো হয়নি। দিন শেষ করেছে তারা ৬ উইকেটে ২২৮ রানে।
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে উইকেট কামড়ে ধরে থাকেন দুই ওপেনার। যেন বাংলাদেশকে দেখাচ্ছিলেন কিভাবে টেস্ট খেলতে হয়। সেই সঙ্গে দিচ্ছিলেন ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষাও। প্রথম চার ওভারে নেননি কোনো রানই। দেখে শুনে বেশ ভালোই খেলছিলেন দুই ওপেনার। প্রথম ১০ ওভার শেষে মাত্র ৯ রান তুলেছে সফরকারী জিম্বাবুয়ে। প্রথম ঘন্টাটা ছিল বাংলাদেশের। আবু জায়েদ রাহী আর ইবাদত হোসেন শুরু থেকেই ছিলেন ধারাবাহিক, দুই ওপেনারকে ভুগিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত কেভিন কাসুজাকে ফিরিয়ে রাহী পেয়েছেন পুরস্কার। শুরুতে ধাক্কা খাওয়ার পর মাটি কামড়ে পড়ে আছেন প্রিন্স মাসভাউরে এবং অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। দুজনই একটু স্বছন্দ হয়ে রান তোলা শুরু করেছেন।
বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে গিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার মাসভাউরে। ১ উইকেট হারানোর পর এরভিনকে সাথে নিয়ে ১১১ রানের জুটি তুলেছেন এই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের তখন একের পর এক বোলিং পরিবর্তন। কিন্তু সাফল্য মিলছে না। তবে দলীয় ১১৮ রানে মাসভাউরে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান নাঈম। ১৫২ বল খেলে ৯ চারে তার সংগ্রহ ৬৪ রান।
দলীয় ১৩৪ নাঈমের দুর্দান্ত ঘূর্ণিতে বোকা বনে গেলেন রানে জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলর। নাঈমের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন টেইলর। ১১ বল খেলে ১০ রান তুলেছেন তিনি। ৩ উইকেট হারিয়ে সিকান্দার রাজাকে নিয়ে লড়াই চালিয়েছেন অধিনায়ক এরভিন। তবে দলীয় ১৭৪ রানে সেই নাঈমের বলেই সাজঘরে ফিরলেন সিকান্দার। লিটনের তালুবন্দী হয়ে ফেরার আগে ৬২ বলে ১৮ রান তুলেছেন তিনি।
সিকান্দার ফিরলে জিম্বাবুয়ের রানের চাকা থেমে যায় কিছুটা। তবে টেস্ট মেজাজে টিমিসেন মারুমাকে নিয়ে নতুন জুটি গড়েন ক্রেইগ আরভিন। এই দুইয়ে মিলে ২৫ রানের জুটি ভাঙেন প্রথম উইকেট শিকারি আবু জায়েদ রাহী। দ্বিতীয় নতুন বল আসার ঠিক আগের ওভারেই উইকেট হারিয়ে ফেলে আরভিনের দল। দলীয় ১৯৯ রানে ব্যক্তিগত মাত্র ৭ রানে ফেরেন টিমিসেন মারুমা।
দলের অন্যরা যখন যাওয়া আসার মিছিলে তখন এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে কক্ষপথে রাখেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। দলকে বড় সংগ্রহের পথে ধরে রেখে নিজেও তুলে নেন শতক। তবে প্রথম দিনের খেলা শেষের মাত্র দুই ওভার বাকি থাকতে নাঈমের চতুর্থ শিকারে পরিণত হন জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক। ব্যক্তিগত ১০৭ রান করে ফেরেন তিনি। তবে যখন ফিরছেন তখন সফরকারীদের স্কোরবোর্ডে সংগ্রহ ২২৬।
টেস্টে সর্বশেষ ছয় ম্যাচেই হারের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পাঁচটি ছিল ইনিংস ব্যবধানে হার। কোনোরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ তিন টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হারে টাইগাররা। টেস্ট ক্রিকেটে এমন পারফরম্যান্সে চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশ। তাই ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে মুমিনুলের নেতৃত্বাধীন দল।
অপরদিকে সদ্যই দেশের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে দারুণ প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করেছে জিম্বাবুয়ে। ১-০ ব্যবধানে সিরিজ হারলেও, জিম্বাবুয়ের লড়াকু মনোভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ ম্যাচের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সেঞ্চুরি পূর্ণ করল বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। গত ২২ বছরে দুই দল তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৯৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। আজ মিরপুরে পূর্ণ হল সেঞ্চুরি। ৯৯ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৫৭ ম্যাচে, জিম্বাবুয়ের জয় ৩৯, ড্র হয়েছে তিন ম্যাচ। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে দুই দলই কোনো দলের বিপক্ষে এত ম্যাচ খেলেনি। বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৯ ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ে ৮৭ ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
বাংলাদেশ একাদশ:
তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহী, এবাদত হোসেন।
জিম্বাবুয়ে একাদশ:
প্রিন্স মাসভাউরে, কেভিন কাসুজা, ক্রেইগ আরভিন (অধিনায়ক), ব্র্যান্ডন টেলর (উইকেটরক্ষক), টিমিসেন মারুমা, সিকান্দারা রাজা, রেগিস চাকাভা, টিনোটেন্ডা মোটোম্বোডজি, ডোনাল্ড তিরিপানো, এইন্সলে এনডিলোভু, ভিক্টর নায়াউচি।