দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের প্রতিবাদে শনিবার বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বৃস্পতিবার দুপুরে হাইকোর্টে তার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর এ কর্মসূচি দেয় দলটি।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ি শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই দিন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিক্ষোভ সভাও করবে দলটি।

নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করে রিজভী বলেন, ‘সরকারের ইচ্ছায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করা হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় তারা অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। সরকার এজন্য আদালতকে ব্যবহার করছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের আদেশের শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু জামিন আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই খারিজ আদেশের মধ্য দিয়ে সরকারের হিংসাশ্রয়ী নীতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। সরকার মুক্তিপণ আদায়ের মতোই নেত্রীকে অন্যায়-অন্যায্য ও সকল আইনি অধিকার লঙ্ঘন করে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আর এর মধ্য দিয়ে সরকার অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার মুক্তিপণ আদায়ের মতোই আচরণ করছে।’

এই সরকারের আমলে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা সুদূর পরাহত মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘বিরোধী দলের অধিকার, গণতন্ত্রে পরমত সহিষ্ণুতা ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করে গোটা জাতিকে নিম্নমানের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রের মালিকানা এখন আর জনগণের নেই। তা এখন অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারী যন্ত্রের হাতে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিপীড়ন যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। সুতরাং মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘সরকারের নেক নজরে পড়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের স্বাধীনতা ত্যাগ করে সরকারের দাসত্ব করাটাকেই সাফল্য মনে করছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা জনগণ বিশ্বাস করে না। জনগণ বিশ্বাস করে, প্রধানমন্ত্রী কেবল তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করতে কারাগারে অন্তরীণ করেছেন। তাই বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে সরকারপ্রধান হিংসা চরিতার্থ করতে টার্গেট করেছে। অর্থাৎ বিনা চিকিৎসায় নেত্রীকে শোচনীয় দুর্দশায় উপনীত করার কৌশলী চক্রান্ত চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সেজন্য আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তাদের সেই টার্গেট বাস্তবায়ন করছে। আদালতকে ব্যবহার করে গুরুতর অসুস্থ নেত্রীর জামিন ও চিকিৎসা নিয়ে সরকারের ছিনিমিনি খেলার অপরিণামদর্শিতার মাশুল একদিন দিতে হবে। সরকারের ইচ্ছায় দেশনেত্রীর জামিন আবেদন খারিজ আদেশের সিদ্ধান্ত জাতিকে এক বিপজ্জনক জায়গায় ঠেলে দেওয়ারই নামান্তর বলেন রিজভী।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য জীবনভর সংগ্রাম করেছেন যে নেত্রী, সেই নেত্রীকে নিপীড়ন-নির্যাতনের জন্য কারারুদ্ধ করে শাসকের অহমিকা এখন অত্যুগ্র মাত্রায়। সরকার দম্ভের সঙ্গে সবার মুখ বন্ধ করে নেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। নেত্রীর জামিনে বাধা দিয়ে সরকার মনের সাধ মেটালেও জনগণ এর উপযুক্ত জবাব অতি শিগগিরই দিতে প্রস্তুত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোরশেদ আলম, আক্তারুজ্জামান বাচ্চুসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ২৭,২০২০)