ডিএসইতে এক সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ১৬ হাজার কোটি টাকা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলো বিশেষ ফান্ড গঠন করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সার্কুলারের পর ১১ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ৫ কার্যদিবস উত্থান হয় শেয়ারবাজারে। এর পরের কার্যদিবস পতন এবং পরের কার্যদিবস উত্থান হয়েছে। কিন্তু এই উত্থানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি শেয়ারবাজার।
আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস থেকে শুরু করে বিদায়ী সপ্তাহের সবগুলো কার্যদিবস পতনে নিমজ্জিত ছিল শেয়ারবাজার। আর এই পতনের কারণে শেয়ারবাজারের সব সূচক, টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। অব্যাহত পতনের কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ৩২ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন ৪৯ শতাংশ কমেছে। আর ডিএসইতে এক সপ্তাহে বাজার মূলধন ১৬ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ৪ শতাংশ কমেছে।
জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩ হাজার ৮৭ কোটি ৪৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৭ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার ৮৭ টাকা বা ৩১.৭২ শতাংশ কম হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৫২১ কোটি ৭৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৪ টাকার।
ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ৬১৭ কোটি ৪৯ লাখ ১২ হাজার ৫৭১ টাকার। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছিল ৯০৪ কোটি ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯৮৮ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে গড় লেনদেন ২৮৬ কোটি ৮৫ লাখ ৮২ হাজার ৪১৭ টাকা কম হয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৩ কোটি ১৮ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৬২ কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধান ডিএসইতে বাজার মূলধন ১৬ হাজার ২৭৯ কোটি ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বা ৪.৫৩ শতাংশ কমেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫৩ পয়েন্ট বা ৫.৩৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৮০ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪৫ পয়েন্ট বা ৪.১২ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ১০০ পয়েন্ট বা ৬.৩০ শতাংশ এবং সিডিএসইটি সূচক ৬৬ পয়েন্ট বা ৬.৯৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০৪৫, ১৪৯২ ও ৮৮৬ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৫৮টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৬টি বা ১৮ শতাংশের, কমেছে ২৮০টির বা ৭৮ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির বা ৪ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহজুড়ে ১২৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার ১৬৩ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৪৫ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯২০ টাকার। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ১২১ কোটি ৪৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫৭ টাকা বা ৪৯ শতাশ কমেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৮২ পয়েন্ট বা ৫.৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৪৩ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ৪৭৯ পয়েন্ট বা ৫.৪৩ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ৮৬৩ পয়েন্ট বা ৬.৭৫ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ৭৬ পয়েন্ট বা ৭.২০ শতাংশ এবং সিএসআই ৪৫ পয়েন্ট বা ৪.৭৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮ হাজার ৩৩৩ পয়েন্ট, ১১ হাজার ৯১২ পয়েন্ট, ৯৭৮ পয়েন্ট এবং ৯০১ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩০৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের হাত বদল হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৮টির বা ২২ শতাংশ, দর কমেছে ২২৩টির বা ৭৪ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির বা ৪ শতাংশ।
মন্দা অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য শুধু শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে প্রত্যেক ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ ফান্ড গঠন করতে পারবে মর্মে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলারের পর উত্থানে ফিরতে শুরু করে শেয়ারবাজারে। এরও আগে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ জানুয়ারি উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং কয়েকটি নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠকের পর ১৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে শেয়ারবাজার আবার মন্দায় পতিত হয়। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রত্যেক ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা করে ফান্ড গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলারের পর কয়েকদিন বাজার ভালো থাকলেও আবার আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে শেয়ারবাজার।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ২৮,২০২০)