ওয়েস্টিনে পাপিয়ার যত ‘পাপ’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়ার অপরাধজগত নিয়ে দেশজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। রাজনীতির আড়ালে অস্ত্র, মাদক ও দেহব্যবসা করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে তিনি। আর এসব অপকর্মের তার অন্যতম আস্তানা গুলশানের ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেল।
তথ্য মতে, পাপিয়া তার অতিথিদের প্রথমেই নিয়ে যেতেন ওয়েস্টিন হোটেলে। লাঞ্চ ও ডিনার শেষে সেখান থেকে নিয়ে যেতেন তার নামে বরাদ্দকৃত সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইটে। সেখানে অতিথিদের সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বৈঠক করতেন পাপিয়া। এরপর পছন্দসই তরুণীকে নিয়ে গোপন কক্ষে প্রবেশ করতেন ভিআইপিরা।
ভবন নির্দেশিকা মতে ওয়েস্টিন হোটেলের টপফ্লোরে রেস্টুরেন্ট, বার ও বেলকুনিতে কফি শপ। নিচতলায় স্ন্যাকস বার-মদের বার। দোতলায় একই ব্যবস্থা। ৫ তলায় স্পা, মেসেজ পার্লার ও সুইমিংপুল। ২১ ও ২২ তলায় প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট। সেখানকার একটি স্যুটে গত বছরের ১২ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২০ দিন ছিলেন পাপিয়া। এ ছাড়া গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই হোটেলে অবস্থান করছিলেন তিনি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে আটকের সময়ও তার নামে ওই স্যুটটি বুকিং ছিল।
মূলত পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সেখানে চলছিল নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, দেশি-বিদেশি তরুণীদের এনে রুম ও স্যুট ভাড়া করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জমজমাট বাণিজ্যতেও বাধা নেই হোটেলটিতে। নিয়ম-নীতিরও বালাই ছিল না সেখানে। অথচ তারকা এই হোটেলে বোর্ডারদের প্রতিদিনকার তালিকা সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে।
বিশেষ করে সুইমিংপুলে ডুলুডুলু চোখে ৬ নারীর জলকেলির ভাইরাল হওয়া ভিডিওর পর প্রশ্ন উঠেছে হোটেল ওয়েস্টিনে আসলে হচ্ছেটা কী? তবে এসব নিয়ে ওয়েস্টিনের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে পাপিয়ার মোবাইল ফোন থেকে র্যাব সদস্যরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ ব্যক্তিদের ভিডিও উদ্ধার করেছেন। এমন এক ভিডিওতে ওয়েস্টিনের মূল মালিক নূর আলীকেও হোটেলের একটি স্যুটে পাপিয়াসহ বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করতে দেখা গেছে।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, পাপিয়ার সঙ্গে রাজনীতি, নির্বাচনসহ নূর আলী নানা বিষয়ে কথা বলছেন। হোটেলটির মালিকের সাঙ্গে পাপিয়ার পাশের সোফায় হাসিমুখে বসে থাকতে দেখা যায় অল্পবয়সী বেশ কয়েকজন সুন্দরী তরুণীকে।
এদিকে পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর হোটেলটির দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আগে যেখানে পাঁচতলায় সুইমিংপুল ও বারের পাশে অনুমোদনহীন সিসা বারে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। সেটা এখন বন্ধ রয়েছে।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গণমাধ্যমকে বলেছেন, পাপিয়া হোটেলের ভেতরে তার কক্ষে এসব অপকর্ম করেছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তার অবৈধ কার্যক্রমকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে কিনা বা তার কার্যক্রমকে বেগবান করতে অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। যদি তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ২৮,২০২০)