দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক সরকারের ট্রেজারি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ব্যাংকটির শেয়ার আপাতত পুঁজিবাজারে না ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুঁজিবাজারে সরকারি ব্যাংকগুলোর শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের শেয়ার না আসলেও জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বিডিবিএলের শেয়ার সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাজারে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি তদারকি করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক গঠিত পুঁজিবাজার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি। সরকারের ট্রেজারি কার্যক্রম বলতে বোঝানো হয়েছে- সরকারের তহবিল, যা দিয়ে বাজেট ও ব্যয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রথমে রূপালী ব্যাংক ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়া হবে। এছাড়া, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক পর্যায়ক্রমে তাদের সরকারি শেয়ারের সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়বে।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, আইসিবি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকের শেয়ার সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে সব ব্যাংককে ভ্যালুয়ার নিয়োগ করে রিভ্যালুয়েশন সম্পন্ন করতে হবে।

সরকারি ব্যাংকের তালিকাভুক্তির শুরুতে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়বে। ইতোপূর্বে ব্যাংকটির ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। বাকি ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি ও শেয়ারমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে দুটি ধাপে সম্পন্ন করা হবে।

সরকার পরিচালিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই বৈঠকে।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ার ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। এখন প্রাপ্ত নথি অনুসারে, আইসিবি সহায়ক সংস্থা মূলধন পরিচালনা সংস্থা এবং সরকারি ব্যাংকের সহায়ক সংস্থা মার্চেন্ট ব্যাংককে যৌথভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শেয়ার ছাড়ার জন্য কাজ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক দেশের বৃহত্তম ব্যাংক। এর পরিশোধিত মূলধন ৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে সোনালী ব্যাংকের মোট অপরিবর্তনীয় ঋণ দাঁড়িয়েছে তার বকেয়া ঋণের ২২ লাখ ৪ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ।

ব্যাংকটি ২ হাজার ৫৬ দশমিক ১৮ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি নিয়ে চলছিল। গত বছর এর পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে তার নন-পারফরম্যান্স ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৬৩ দশমিক ১ কোটি টাকা, যা তার মোট বকেয়া ঋণের ৩৮ দশমিক ২২ শতাংশ। বিডিবিএলের পরিচালন মুনাফা গত বছর দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ০৭ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকের ব্যালান্স শিট অনুসারে, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। আর গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৮৭ দশমিক ৯ কোটি টাকা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০১ মার্চ,২০২০)