দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দুর্নীতির মামলায় পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল দম্পতির জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল মান্নান।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুপুরে এ আদেশ দেওয়ার পর বিকাল না গড়াতেই আইন মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলির (স্ট্যান্ড রিলিজ) নির্দেশ পেয়েছেন ওই বিচারক। অন্যদিকে, বিচারক বদলের চার ঘণ্টার মধ্যেই মামলাটিতে জামিন পান ওই দম্পতি।

আইন মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিচারককে বদলির আদেশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র।

পিরোজপুর জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল তিনটি মামলায় এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীন একটি মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো আদেশের পর আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবী আদালতে তাদের অসুস্থতার চিকিৎসা প্রতিবেদনসহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ও ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিচারক ডিভিশনসহ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলির চিঠি পাঠানো হয়। এরপর তিনি যুগ্ম ও জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

বিকেল পৌনে চারটার দিকে আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে পুনরায় জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেল চারটার দিকে বিচারক আসামিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।

দুদকের আইনজীবী মনসুর উদ্দিন হাওয়লাদার বলেন, আউয়ালের বিরুদ্ধে জেলার নাজিরপুর থানার সামনে ও উপজেলা সদরের ভূমি অফিসের পেছনের সরকারি জমি দখল করার অভিযোগ রয়েছে।

তিনি জানান, এই অভিযোগে গত ৩০ ডিসেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর আউয়ালের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেন। এর একটিতে তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়। এসব মামলায় তারা গত ৭ জানুয়ারি হাই কোর্ট থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন পান।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের জামিন আবেদন নাকচ হলে আদালত পাড়াসহ পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আদালত পাড়াসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ উত্তেজিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে।

উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে শহরের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। দলের নেতাকর্মীরা সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করায় যান চলাচলও বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।

উল্লেখ্য, পিরোজপুর-১ আসনে ২০০৮ সালে আউয়াল প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন। বর্তমানে এ আসনের সাংসদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৪ মার্চ,২০২০)