‘সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার খর্ব হয়েছে’
রানা হানিফ, দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : স্পিকারের অনুমতি না নিয়ে সংসদ সদস্যদের জন্য ‘সুযোগ-সুবিধা, বিশেষাধিকার ও স্বাধীনতা’ খর্ব করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দুই সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট্ আইনজ্ঞরা।
একই সঙ্গে দলটির অন্যান্য সংসদ সদস্যরাও গ্রেফতার এড়াতে রয়েছেন আত্মগোপনে। তাই সংসদ সদস্যদের অধিকার রক্ষায় স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবীরা।
বিএনপির দুই প্রবীণ সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও এমকে আনোয়ারকে শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। এরপর পল্টন থানায় দায়ের করা পুরাতন মামলায় তাদেরকে আসামি দেখানো হয়। শনিবার এই দুই সংসদ সদস্যসহ গ্রেফতারকৃত বিএনপির অপর তিন নেতাকে নিম্ন-আদালতে হাজির করলে, আদালত রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানি বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশন চলা অবস্থায় স্পিকারের অনুমতি ছাড়া বিরোধী দলের দুই সংসদ সদস্যকে গ্রেফতারকে সংসদ প্রদত্ত অ্যামেনিটিস, প্রিভিলেজ অ্যান্ড ইম্যুনিটিস বা সুযোগ-সুবিধা, বিশেষাধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে বলে মনে করছেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক।
ব্যারিস্টার রফিক উল হক দিরিপোর্ট২৪ ডটকমকে বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের বিশেষাধিকার নিশ্চিত করতে একটি আইন রয়েছে। ওই আইনে বলা আছে, সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার ৫ দিন আগে থেকে শেষ হওয়ার পাঁচ দিন পর পর্যন্ত কোনো সদস্যকে যে কোনো মামলায় গ্রেফতার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে। আর সংসদ সদস্যদের জন্য প্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্পিকারের নিজের। অধিবেশন চলা অবস্থায় কোনো একজন সদস্য আটক থাকবেন বা অসুস্থ থাকবেন তা স্পিকার জানবেন না তা কীভাবে সম্ভব।’
রফিক উল হক বলেন, ‘বিরোধী দলের দুই সংসদ সদস্য এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদকে গ্রেফতার করে প্রশাসন সরাসরি এ আইন লঙ্ঘন করেছে। আর এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্পিকার নির্দেশ দিতে পারেন।’
এদিকে বিএনপির ডাকা তৃতীয় পর্যায়ের হরতালের প্রথম দিন রবিবার সংসদ ভবন এলাকায় দলের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ব্যতিত অন্য কোনো সদস্যদের উপস্থিতি ছিলো না। আর গ্রেফতারের ভয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তিনি দিরিপোর্ট২৪ ডটকমকে বলেন, ‘প্রথমত স্পিকারের অনুমতি না নিয়ে সংসদ অধিবেশন চলা অবস্থায় বিরোধী দলের দুইজন সংসদ সদস্যকে একটি ভুয়া মামলায় গ্রেফতার করে সরকার আইন অমান্য করেছে। বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপও নেননি স্পিকার। অন্যদিকে সংসদের সকল সদস্যের জন্য প্রদত্ত বিশেষাধিকার রক্ষা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টিও দেখার দায়িত্ব স্পিকারের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিএনপির সংসদ সদস্যরা যখন গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সেখানে স্পিকার নির্বিকার।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি স্পিকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পিকারের শপথ ও নিরপেক্ষতা ভঙ্গ হয়েছে। সংসদ সদস্য গ্রেফতার হবে আর তা হাউজ জানবে না এটা কীভাবে হয়। বিষয়টি সংসদীয় গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। সংসদে জন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিল উত্থাপন করা হলে, তা পাসের জন্য সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত ও ভোটের প্রয়োজন হয়। তাই সংসদ অধিবেশন চলাকালে কোনো সদস্যের অনুপস্থিতি সম্পর্কে অবশ্যই স্পিকারকে অবগত করতে হয়।’
সংসদ প্রদত্ত অ্যামেনিটিস, প্রিভিলেজ অ্যান্ড ইম্যুনিটিস বা সুযোগ-সুবিধা, বিশেষাধিকার ও স্বাধীনতা আইনটিতে বলা হয়েছে, ‘সংসদ অধিবেশন বা সংসদীয় কোনো কমিটির সভা (কমিটির সদস্য হলে) অনুষ্ঠানের ঘোষিত সময়ের আগে ও পরে কোনো ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো অপরাধে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা যাবে না। সংসদ ভবন এলাকা থেকে কোনো সংসদ সদস্যকে স্পিকারের অনুমতি ছাড়া কোনো নাগরিক বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে গ্রেফতার করা যাবে না।’
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী দিরিপোর্ট২৪ ডটকমকে বলেন, ‘কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে বিষয়টি সত্য নয়। আইনে বলা হয়েছে, সংসদ ভবন এলাকার মধ্য থেকে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে। এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে গ্রেফতার করে প্রশাসন কোনো আইন লঙ্ঘন করেনি। আইন মেনেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তবে বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
(দিরিপোর্ট২৪/আরএইচ/এইচএসএম/নভেম্বর ১০, ২০১৩)