দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীতে দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ছিনতাই চক্র। সাময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বদলাচ্ছে ছিনতাইয়ের কৌশল। তাদের প্রধান টার্গেট রিকশার যাত্রী ও পথচারীরা। ছিনতাইয়ের নিরাপদ সময় বেছে নিয়েছেন ভোর রাতে ও জনবহুল এলাকায়। দিনে তৎপর সালাম পার্টি। আর শেষ রাতে বাড়ে টানা পার্টি ও গামছা পার্টির তৎপরতা। প্রতিবাদ করলেই এদের হাতে খোয়াতে হয় প্রাণ।

এদিকে গত কয়েকদিনে রাজধানীতে র‌্যাব-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারী।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাহবাগ, বংশাল, চকবাজার, পল্টন ও ওয়ারী, নিউমার্কেট, পলাশী, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল, চানখাঁরপুল হয়ে আনন্দবাজার সড়কে তাদের তৎপরতা বেশি। ছিনতাই করা এ সব মোবাইল বিক্রি অনলাইনেও।

এরা একেকটা গ্রুপে ভাগ হয়ে পথচারীদের দিকে নিবির নজর রাখে। সুযোগ বুঝেই সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে। এমন সময় পাশে থাকা অন্য সদস্যরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়।

পুলিশ জানায়, দিনে সক্রিয় থাকে সালাম পার্টি। রাত ৮টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত গামছা পার্টি এবং মধ্যরাত থেকে সকালে সড়কে লোকজনের আনাগোনা না হওয়া পর্যন্ত সক্রিয় থাকে টানা পার্টি। মধ্যরাত কিংবা ভোরে কর্মস্থল বা ঢাকার বাইরে থেকে এসে ঘরে ফেরা মানুষ বেশি ছিনতাইয়ের শিকার হন টানা ও গামছা পার্টির।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে প্রায় ১ হাজার। তবে ছিনতাইয়ের শিকার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যক্তিই পুলিশের কাছে যান না।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী- পুরান ঢাকা, মিরপুর, মতিঝিল, গাবতলি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই বেশি ঘটে। এছাড়া সাতরাস্তা, নাবিস্কো, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী রেলক্রসিং, বনানী, গুলশান-১, গুলশান লিংক রোড, রামপুরা ব্রিজ, ধানমণ্ডি, বংশাল, চকবাজার, কলাবাগান, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় গলিপথগুলোতে ওতপেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। এসব পথে যাতায়াতকারী রিকশা বা হাঁটা যাত্রীদের ঠেক দিয়ে এরা ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব।

গামছা পার্টির সদস্যরা রাত ৮টা থেকে ভোর পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায়। এ চক্রের এক সদস্য অটোরিকশা চালায়। আর দু’জন পেছনে বসা থাকে। টার্গেট ব্যক্তিকে কৌশলে সিএনজিতে তোলে। এরপর দু’জনের মাঝখানে বসিয়ে কেড়ে নেয় সর্বস্ব। প্রতিবাদ ও নড়াচড়া করলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশ নির্জন স্থানে ফেলে দেয়।

সম্প্রতি একটি হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে গামছা পার্টির ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা একমাসে ৮ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করে। অজ্ঞান বা অর্ধমৃত অবস্থায় ৩০-৪০ যাত্রীকে বিভিন্ন ফ্লাইওভার বা নির্জন স্থানে ফেলে দেয়ার কথাও স্বীকার করে চক্রের সদস্যরা- এসব যাত্রীর অনেকেই বাস-ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন। এরা প্রতি রাতে ১ থেকে ৬টি ছিনতাই করত বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করে।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিজয় বিপ্লব বলেন, ছিনতাই থেকে বাচার জন্য সাবধানে চলতে হবে। ফাকা বা নির্জন এলাকা পরিহার করতে হবে। অটোরিকশা বা মাইক্রোবাসে অপরিচিত লোকদের সাথে ওঠা থেকে বিরত থাকতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৭ মার্চ,২০২০)