দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর পায়রা নদীর উপরে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেতু হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৪২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে নিজ এলাকার পায়রা নদীতে সেতু চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল পটুয়াখালীর শিশু শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। সেই চিঠির জবাব দিয়ে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার সেই আশ্বাস পূরণ করল সরকার। স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে শীর্ষেন্দুর। সেতুর নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। 

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পসহ নয় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীর উপর এক হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণ’প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে|

মন্ত্রী বলেন, আপনাদের সবার মনে আছে একটি সেতু চেয়ে শিশু শীর্ষেন্দু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিল। শিশুটির চিঠিতে অনেক মানবিক যুক্তি ছিল। যদিও প্রয়োজনের তাগিদেই এখানে সেতু হতো। কিন্তু এখন খুব দ্রুত হচ্ছে। বলতে পারেন, শীর্ষেন্দুর চিঠিতে প্রকল্পটি শীর্ষে উঠেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত মানবিক-দয়ালু। শিশুকে দেওয়া কথা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি শিশু শীর্ষেন্দুকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মার্চ ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ আট প্রকল্পের অনুমোদন
এদিকে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নসহ আরও আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে মাতারবাড়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। যেখানে সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হবে দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং জাইকার ঋণ থেকে আসবে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, নয়টি প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হবে ছয় হাজার ১৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর কোনো আবেগের জায়গা নয়, এটা প্রয়াজন। এ প্রকল্পের কিছু ব্যয় বেশি ধরা আছে। এক্ষেত্রে সব ব্যয় সরলীকরণ করলে হবে না। এর যথেষ্ট কারণও আছে। যেমন পায়রা ও মাতারবাড়ির জমির কনফিগারেশন এক নয়। তাছাড়া মাতারবাড়ীর সড়ক কোনো সাধারণ সড়ক হবে না। এগুলো মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো হবে।

প্রকল্পটিকে স্বপ্নের প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।’

এছাড়া অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, লেবু খালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেস ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলাধীন পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথল যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ২০ তলা ভিত বিশিষ্ট দুটি বেইজডসহ ১০ তলা প্রধান কার্যালয় নির্মাণ কাজ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাবিশ্ব করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বের বাইরে না। সুতরাং আমাদের এখানেও প্রভাব পড়বে। তবে কতটুকু প্রভাব পড়বে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ইতিমধ্যেই চীন থেকে অনেক ব্যবসা দেশে আসতে শুরু করেছে। এটি পজেটিভ দিক।

এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস নিয়ে আজ তেমন কিছু বলেননি। তবে সবাইকে সাবধান থাকতে বলেছেন।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১০মার্চ,২০২০)