দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে গতি আনতে ব‌্যাংক ও আর্থিকখাতের বাইরের বড় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’, ‘পিএইচপি গ্রুপ’ ও ‘ওয়ালটন’-এর মতো বড় কোম্পানিগুলো দেশের পুঁজিবাজারের গতি আনতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বছর দুয়েক আগের বিপর্যয়ের ধারা কাটিয়ে অনেকটাই স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছে দেশের পুঁজিবাজার। ছোটখাটো সংশোধনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে দৈনিক লেনদেন, মূলধন ও সূচকের পরিমাণ বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এই খাতকে গতিশীল করে তুলেছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর বহুমুখী উদ‌্যোগ বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করছে। এছাড়া, স্টেক হোল্ডারদের সক্রিয়তাও এতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন তারা।

তবে, এই স্থিতিশীলতা ধরে রাখাই পুঁজিবাজারের নীতি-নির্ধারকদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ব‌্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে বড় ভালো কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত। দেশের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে পারলে এই খাতের গতি ফিরবে বলেও মনে করছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের উন্নয়নে পুঁজিবাজার ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও শেয়ারবাজার ভূমিকা রাখতে পারে। এ খাত থেকে সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগের অভাবে পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ছে না। এই খাতে সুফল পেতে হলে দেশি-বিদেশি বড় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ওয়ালটনসহ দেশের বড় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করতে হবে বলেও বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

দেশে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো পুঁজিবাজারে এলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের বিকল্প নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেক ভেবেচিন্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। বেশিরভাগ সময়ই তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেন।ফলে তাদের লোকসান কম হয়।’

আবু আহমেদ বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ধরে রাখতে হবে। এ জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারের পতন রোধ করতে হবে। বড় বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আগের তুলনায় পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র, বড় প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এটি ইতিবাচক। এই হার আরও বাড়াতে হবে। তাহলে বাজার স্থিতিশীল হবে। এতে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবে, দেশের ভালো কোম্পানিগুলোকেও আনা যাবে। ’

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘এসব কোম্পানির ক্ষেত্রে তাদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। স্বচ্ছতার সুযোগ দিতে হবে। দ্রুত তালিকাভুক্তির সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে অনেক বেশি সময় নেওয়া হয়। এসব রোধ করা না গেলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসবে না।’

প্রায় একই কথা বলেছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এবং ডিএসই ব্রোকারেজ অ‌্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত। আমাদের দেশে উদ্যোগ নেওয়া হলেও বড় কোম্পানিগুলোকে এখনো পুঁজিবাজারে আনা হয়নি। অন্যদিকে দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোর কথা যদি বলি, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, পিএইচপি গ্রুপ, ওয়ালটন বড় ও ভালো কোম্পানি।’ এই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে পারে বলেও তিনি মন্তব‌্য করেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৩মার্চ,২০২০)