প্রকাশিত হয়েছে কল্লোলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আত্মপ্রতিকৃতি’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ‘পরাজয় নিশ্চিত জেনেও মেনে না নেওয়া যোদ্ধা’, বিশিষ্ট উদীয়মান চলচিত্র নির্মাতা ও সৃষ্টিশীল গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হাসিবুর রেজা কল্লোলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আত্মপ্রতিকৃতি’ প্রকাশিত হয়েছে। কোলকাতা বইমেলায় সম্প্রতি ৪৪ পৃষ্ঠার চমৎকার তৈলচিত্রকর্ম মলাটের এ কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছে হাসিবুর রেজা কল্লোলের লেখা শিরোনামহীন ৪৬টি কবিতা। শৈশব থেকেই, সেই যশোরে ইনস্টিটিউটের শনিবাসরীয় সাহিত্য আসর থেকে লিখছেন তিনি।
‘ব্যক্তিগতভাবে যারা আমাকে চেনেন, তারা আমার অত্যাচার সহ্য করেন, এবার তার সাথে দিলাম কবিতার অত্যাচার’- বইয়ে উল্লেখ করা হাসিবুর রেজা কল্লোলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আত্মপ্রতিকৃতি’র প্রচ্ছদ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতি আর্টিস্ট কাজী অনির্বাণের তৈলচিত্রকর্ম অবলম্বনে করা হয়েছে।
জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল জিটিভি’র বার্তা ও অনুষ্ঠান বিভাগের প্রযোজনা প্রধান হাসিবুর রেজা কল্লোলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আত্মপ্রতিকৃতি’র ভূমিকা লিখেছেন কথা সাহিত্যিক সাদাত হোসাইন। প্রকাশক মনিরুল হক কর্তৃক গ্রন্থটি অনন্যা থেকে প্রকাশিত। এটির কপিরাইট শিল্প রেজা ও সত্তা রেজা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী কাব্যগ্রন্থের শুরুতেই তার আশীর্বাদ বাণীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, কবির ব্যক্তি হৃদয়ের অনুভূতির প্রকাশনার গতিই কবির মূল অবলম্বন। এই কথাই মনে পড়লো কল্লোলের কবিতা পাঠ করে। ক্ষুদ্র—কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ও নিটোল একটা কাব্যগ্রন্থে কবি আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন কিছু কবিতা, যেগুলোতে তাঁর হৃদয়ের প্রগাঢ় উজ্জ্বল অনুভূতির বাষ্পে ভরা। কবিতাগুলির আন্তরিকতা অনুভব করার মত। একটা সংবেদনশীল মনের স্পর্শে লেখাগুলি অনুভূতি-গম্য হয়ে উঠেছে। আন্তরিক লেখাগুলি পাঠক-পাঠিকার হৃদয় ও মনে পৌঁছে যাবে বলে আশা রাখি।
’আমার কথায়’ কাব্যগ্রন্থকার কবি হাসিবুর রেজা কল্লোল বলেছেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনেও মেনে না নেয়া যোদ্ধা আমি। জীবনটা যদি কয়েকটা অধ্যায়ে ভাগ করি সেটার প্রতি পরতে গল্পেরই বাস। প্রকাশিত হলো আমার প্রথম বই ‘আত্মপ্রতিকৃতি’; লিখছি শৈশব থেকেই, সেই যশোর ইনস্টিটিউটের শনিবাসরীয় সাহিত্য আসর থেকে। মলাটবন্দী বইয়ের স্বপ্ন থাকলেও সেই উদ্দেশ্য নিয়ে লিখিনি, কারণ— কে পড়বে আমার কবিতা!
আমার প্রকাশক মনিরুল হক ভাই বেশ কয়েকবছর ধরে তাগাদা দিয়ে আমাকে দিয়ে এই বইটি লিখিয়ে নিয়েছেন, তাঁর কাছে আমার আজন্মের ঋণ। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কবিতাগুলো, প্রকাশিত গানগুলো একসাথে করে দেয়ার জন্য আমি ক্যাথেরিন মনি রাজোরিওর কাছে কৃতজ্ঞ। আমার সহধর্মিণী জেসমিন আকতার বিথী অসীম ক্ষমায় আমাকে আর আমার কবিতাকে সহ্য করেছেন বলে তাকে ভালবাসামিশ্রিত ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আরেকজন মানুষের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি- তিনি আমার বন্ধু ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন, তার আন্তরিক উৎসাহ আমাকে সবসময় সাহস যোগায়। রঞ্জন মন্ডল (জেরিদা’), দেবদ্বীপ পুরোহিত (মানুদা’), তপন রায় (বচন দা’), জয়ন্দা’, নাদিম ভাই, কাজী রাকিবের প্রতিও আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা।
প্রয়াত কবি মাহবুবুল হক শাকিল, কাজী মাজেদ নেওয়াজ, সাদাত হোসেইন- কবিতা দিয়ে, ব্যক্তিগত প্রভাব দিয়ে আমাকে কবিতা লিখতে উৎসাহিত করেছেন। ছবিতে আমি প্রথম কবি দেখেছি কাজী নজরুল ইসলামকে, আর দিব্য চোখে যশোরের কবি আজিজুল হককে। আমার কবিতায় তাদের কোনও প্রভাব যদি থেকে থাকে তা আমাকে আনন্দিত করবে। ব্যক্তিগতভাবে যারা আমাকে চেনেন, তারা আমার অত্যাচার সহ্য করেন, এবার তার সাথে দিলাম কবিতার অত্যাচার। পড়বেন, ভুল শুধরে দেবেন, বকবেন- আমি শিখবো, খুশি হবো।
গ্রন্থের ভূমিকায় কথা সাহিত্যিক সাদাত হোসাইন লিখেছেন, শব্দের সাধ্য কী অনুভূতি বোঝায়! এই কথাটি খুব বিশ্বাস করি আমি। আর করি বলেই নিঃসঙ্গ রাত্রির বুকের গহীন থেকে নিড়ে আসা সুক্ষ্ম কোন দুঃখ যখন আঁকড়ে ধরে, তখন চুপ করে থাকি নিজের ভেতর। নিজের সাথে কথা হতে থাকে অবিরাম। সেই কথাই কি কবিতা? হয়তো ,হয়তো না। কবিতাতো কথাই। কিন্তু সকল কথাই কি কবিতা? মৃত্যুর আগে মানুষ জেনে যায়, চলে যাওয়ার সংবাদ- একজন কবি লেখার মুহূর্তেও জানতে পারেনা কি লিখতে হবে, কারণ ঈশ্বরের ভর হয়, সে সময়, কবি ও কবিতায়। হাসিবুর রেজা কল্লোলের কথাগুলো এই প্রশ্নের এক দুর্দান্ত জবাব। পড়তে গিয়ে মনে হয় নিজেকেই পড়ছি, খুব চেনা অথচ অচেনা নিজেকেই নতুন করে আবিস্কার করছি। এ যেন নিজের ভেতর অনাবিস্কৃত এক ’এল ডো’র্যাডো। এখানে কত শত উপলব্ধির, অনুভূতির মুক্তো দানা এভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, কে জানত! ’পুড়ে পুড়ে স্রষ্টাকে পূর্ণতা দেয়াটাই সৃষ্টির শেষ কর্তব্য…’ কিংবা- যদি হয়- এই রাতটি আমার জীবনের শেষ রাত! পিতার প্রেমভরা জীবনের শেষ কবিতা মুছে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে পিতাকে! আমার স্তব্ধ পুত্র ভূল গণিতে গুনবে— কতবছর বইতে হবে তাকে কলংকিত পিতার অস্তিত্ব..!’ হাসিবুর রেজা কল্লোল-কে আমি বলি পাথুরে বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা এক আশ্চর্য জলজ জগত। সেই ছলছল জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শুনতে আলগাছে, নিরালায় কান পাততে হয় তাঁর কথা ও কবিতায়। শব্দ কিংবা নৈঃশব্দ্যেও। হাসিবুর রেজা কল্লোলের শব্দগুলোকে তাই মনে হতে থাকে অনুভবের সোনাঝরা ফসলের মাঠ। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, সেই শব্দচাষে সৃষ্টি হতে থাকে এক আশ্চর্য নৈঃশব্দ্য। আর কে না জানে নৈঃশব্দ্যই অনুভূতির গভীরতম স্রষ্টা। তীব্রতম স্পর্শ। সেই স্পর্শে ক্রমশই স্পর্শিত হতে থাকে মন ও মানুষ, ভাবনা ও ভুবন।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/ মার্চ ১৭,২০২০)