১২ কার্যদিবসে মূলধন হারিয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের শেয়ারবাজার অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ এই অস্থিরতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। যার ফলে শেষ বারো কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বাজার মূলধন ৪৪ হাজার কোটি টাকা নাই হয়ে গেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। একই সময়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বাজার মূলধন ৪২ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৩ কোটি ১৮ লাখ টাকায়। মার্চ মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত ডিএসইতে ১২ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। আর এই ১২ কার্যদিবসে বাজার মূলধন ৪৪ হাজার ৯০ কোটি ৭ হাজার ২০০ টাকা বা ১২.৮৫ শতাংশ কমে ১৬ মার্চ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৩ কোটি ১০ লাখ ৯৮ হাজার টাকায়। অর্থাৎ এই ১২ কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসে বাজার মূলধন ৩ হাজার ৬৭৪ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার ১৬৬ টাকা করে কমেছে।
একই সময়ে সিএসইতে বাজার মূলধন ৪২ হাজার ৯১ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বা ১৫.৩৫ শতাংশ কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ১১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। আর মার্চ মাসের ১৬ তারিখ বাজার মূলধন দাঁড়ায় ২ লাখ ৩২ হাজার ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি কার্যদিবসে সিএসই বাজার মূলধন হারিয়েছে ৩ হাজার ৫০৭ কোটি ৫৮ লাখ ৬৩৩ টাকা করে।
মার্চ মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত ১২ কার্যদিবস শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে এই ১২ কার্যদিবসের ৮ কার্যদিবসই পতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। ৮ কার্যদিবসের বেশিরভাগ কার্যদিবসই বড় পতন হয়েছে ডিএসইতে। আর বাকি চার কার্যদিবস উত্থান হয়েছে। উত্থান-পতনের হিসাব শেষে দেখা গেছে, ডিএসইতে এ সময় পর্যন্ত প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭০৮ পয়েন্ট বা ১৫.৭৯ শতাংশ কমে ১৬ ফেব্রুয়ারি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৭৩ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৭১ পয়েন্ট বা ১৬.৩৪ শতাংশ কমে ৮৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২২৭ পয়েন্ট বা ১৫.২৩ শতাংশ কমে ১ হাজার ২৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
একই সময়ে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২ হাজার ১৬৬ পয়েন্ট বা ১৫.৭৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫৭৬ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ১ হাজার ৩১৬ পয়েন্ট বা ১৫.৭৯ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ১ হাজার ৭৫০ পয়েন্ট বা ১৪.৬৯ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ১৫০ পয়েন্ট বা ১৫.৩৩ শতাংশ এবং সিএসই ১৫১ পয়েন্ট বা ১৬.৭৩ শতাংশ কমে ১৬ ফেব্রুয়ারি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭ হাজার ১৭ পয়েন্টে, ১০ হাজার ১৬২ পয়েন্টে, ৮২৮ পয়েন্টে এবং ৭৫০ পয়ন্টে।
শেয়ারবাজারের এই অস্থিরতাকে স্থিরতার দিকে ফিরিয়ে আনতে সোমবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠক শেষে বিএবি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেছেন, এখন বাজারে যে প্রায় ৫০টি ব্যাংক রয়েছে, সবাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী ২০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে। কিন্তু এগুলো একসাথে কেনা হবে না। ক্রমান্বয়ে প্রতিটি ব্যাংক ওই টাকার শেয়ার কিনবে। এ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মনিটরিং করবে। প্রতি সপ্তাহে এ নিয়ে একটি মিটিংও করা হবে। বৈঠকের পর এমন ঘোষণার ফলে শেয়ারবাজার নিয়ে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। তাদের মতে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে সত্যি বিনিয়োগে আসলে শেয়ারবাজার সমনের দিকে এগিয়ে যাবে।
আলী খবির নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, সোমবারের বৈঠকের সিদ্ধান্তকে আমরা খুব পজেটিভলি নিয়েছি। যেহেতু অর্থমন্ত্রীর ডাকে ব্যাংকগুলো সারা দিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীও শেয়ারবাজারের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক, সে কারনে আমাদের মনে একটি আশার জন্ম নিয়েছে। আমরা সাধারন বিনিয়োগকারীরা একটু স্বস্তি পাচ্ছি কারন স্থায়ীভাবে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর মত একটা অবস্থান দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এখন মুজিব বর্ষ চলছে। আমার আশার করবো মুজিব বর্ষে দেশের শেয়ারবাজারসহ সামগ্রিক অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। দেশের শেয়ারবাজারসহ অর্থনীতির উন্নতির মধ্য দিয়ে সফল হবে মুজিব বর্ষ।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৭মার্চ,২০২০)