ভারতে ‘শাট ডাউন’
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: করোনা মোকাবিলায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রয়োজন ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঘর থেকে বের না হতে বারণ করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতই প্রথম দেশ যারা ‘শাট ডাউন’ করলো। করোনা মোকাবিলায় এর আগে চীন ‘শাট ডাউন’ করেছিল। চীনের পর এখন ইউরোপের দেশগুলোও শাট ডাউন করছে। সেই পথে হাটলো ভারতও। এমনই পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
-আসুন আমরা সবাই নিজে বাঁচি, অন্যকে বাঁচাই, দেশকে বাঁচাই
- কিছু দিন পরেই নবরাত্রি আসছে, এটা শক্তির উপাসনা
- এই ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে মানবজাতি জয়ী হোক
- দেশে কেন্দ্রীয় সরকার হোক বা রাজ্য সরকার, জনপ্রতিনিধি হোক বা বিদ্বজ্জন, সবাই এই মহামারি থেকে বাঁচতে যোগদান করছেন
- এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে এক হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে
- এই সঙ্কট এত বড় যে এক দেশ অন্য দেশকে সাহায্য করতে পারছে না
- আশঙ্কা ও ভয়ের বাতাবরণও তৈরি হয়
- নিজের যে টুকু করা দরকার, সেটা করেছেন
- গত দু’মাসে যে সঙ্কট উপস্থিত হয়েছে, তা নিজের সমস্যা মনে করে সবাই সমাধান করার চেষ্টা করেছেন
- মজুতদারি করবেন না, আতঙ্কে অতিরিক্ত জিনিসপত্র কিনবেন না
- দেশে দুধ, খাবার-সহ অত্যাবশ্যক জিনিসপত্রের ঘাটতি যাতে না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
- কেউ অফিসে আসতে না পারলে, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবেন না, মানবিক ব্যবহার করুন
- এই টাস্ক ফোর্স আর্থিক সমগ্র বিষয়ে নজর রাখবে
- আর্থিক ব্যবস্থার মোকাবিলা করতে কোভিড-১৯ ইকনমিক টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে, নেতৃত্বে থাকছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন
- এই মহামারি অর্থ ব্যবস্থার উপরেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে
- পারিবারিক চিকিৎসক বা পরিচিত চিকিৎসকের মাধ্যমে ফোনে পরামর্শ নিন
- দেশবাসীকে আমার অনুরোধ, রুটিন চেকআপ করার জন্য হাসপাতাল এড়িয়ে চলুন
- আমদের পুরো শ্রদ্ধার সঙ্গে এদের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি
- সাইরেন বাজিয়ে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হোক
- যাঁরা সেবা করছেন, তালি, থালা, ঘণ্টা বাজিয়ে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব
- এই দিন আমরা সবাই একে অন্যকে ধন্যবাদ দিই
- এরা সবাই বিপদ মাথায় নিয়ে কাজ করছেন
- সরকারি কর্মী হোক, বিমানবন্দরের কর্মী হোক, সংবাদ মাধ্যমের কর্মী হোক, সবাই নিজেদের কথা না ভেবে অন্যের সেবায় নিয়োজিত
- ভারত কেমন প্রস্তুত, তা দেখা ও পরীক্ষা করার সময়ও এটা
- আপনারা এটাও করতে পারেন, প্রতি দিন ১০ জনকে ফোন করে বলুন
- সবাইকে অনুরোধ করব, আজ থেকে রবিবার পর্যন্ত এই জনতা কার্ফুর খবর ছড়িয়ে দিন
- সাধারণ নাগরিক ঘর থেকে বেরোবেন না
- সকাল সাতটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত কার্ফু পালন করুন
- রবিবার জনতা কার্ফু করুন, ঘর থেকে বেরোবেন না, সবাই ঘরে থাকুন
- সেটা হল জনতা কার্ফু, জনতার মাধ্যমে, জনতার দ্বারা কার্ফু হোক
- এই সময়ে আরও একটা জিনিস চাইব
- যুদ্ধ না হলেও এক দিন, দু’দিন ‘ব্ল্যাকআউট’ করা হত পরীক্ষামূলক ভাবে
- যুদ্ধের সময় গ্রামে গ্রামে অন্ধকার করে দেওয়া হত, বন্দরের আলো নিভিয়ে দেওয়া হত
- ৬০ বছরের বেশি বয়সের প্রবীণরা ঘর থেকে বের হবেন না
- বাকি দেশবাসীরাও ঘরে থাকার চেষ্টা করুন
- সরকারি সেবায় যুক্ত যাঁরা, সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সক্রিয়তা প্রয়োজনীয়
- আগামী কয়েক সপ্তাহ অত্যন্ত জরুরি কাজ থাকলে, তবেই ঘর থেকে বেরোন
- আমাদের সবার উচিত সতর্ক থাকা, আপনারা এ দিক সে দিক ঘুরে বেড়াবেন, আর করোনা থেকে বাঁচবেন, এটা সম্ভব নয়
- আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা নিজেরা সংক্রামিত হওয়া থেকে বাঁচব, অন্যদেরও বাঁচাব
- এর জন্য দেশবাসীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
- বহু মানুষকে আইসোলেশনে রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে
- এই পরিস্থিতিতে সবার দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক
- করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে এমন কোনও নিশ্চিত ওষুধ তৈরি হয়নি, কোনও টিকা তৈরি হয়নি
- আপনাদের আগামী কয়েক সপ্তাহ আমি চাই
- আজ ১৩০ কোটি দেশবাসীর কাছে কিছু চাইতে এসেছি
- এটা আপনাদের আশীর্বাদের ক্ষমতা, আমরা সবাই মিলে নির্ধারিত লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি
- আপনাদের কাছে যখনই কিছু চেয়েছি, আপনারা নিরাশ করেননি
- ফলে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন
- করোনা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে, এমন ভাবনা ঠিক নয়
- দু’টি বিশ্বযুদ্ধেও এত দেশ জড়িয়ে পড়েনি
- বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি
- গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ
উল্লেখ্য যে, ২৪ ঘণ্টায় ভারতে লাফিয়ে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। আজ মৃত্যু হল আরও এক জনের। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সত্তোরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। তিনি পাঞ্জাবের বাসিন্দা। জানা যায়, এই ব্যাক্তি সদ্য জার্মানি থেকে ইতালি হয়ে ভারতে ফিরেছিলেন। ইতালি থেকে ফেরার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয়।
কর্নাটক, দিল্লি, মহারাষ্ট্রের পর এবার পাঞ্জাবে মৃত্যু হল করোনা আক্রান্তের। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার গ্রামটিকে পুরোপুরি ‘লক ডাউন’ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই ব্যক্তির চিকিৎসক, পরিবারের লোক ও বন্ধুদেরও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। আজই ভারতে নতুন করে ১৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ১৭১ জন। এর আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় কর্নাটকের বাসিন্দা ৭৬ বছরের মুহাম্মদ হুসেন সিদ্দিকির। ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি সৌদি আরব থেকে ওমরাহ হজ করে দেশে ফেরেন। তারপরই তার শরীরে করোনার নমুনা মেলে।
অন্যদিকে ভারতে নতুন করে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। রবিবার থেকে বিদেশি বিমান ভারতে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। এই দিন থেকে কোনও বিদেশি বিমান ভারতের কোনও বিমানবন্দরে নামতে পারবে না।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২০মার্চ,২০২০)