পুঁজিবাজারের ভিত্তিকে শক্ত করবে ওয়ালটন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে প্রায় এক দশক ধরে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। ফলে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির অভাব তৈরি হয়েছে। তবে দীর্ঘ বিরতির পর ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মতো প্রতিষ্ঠিত ও অ্যাসেট বেজড কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এতে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীসহ স্টকহোল্ডারদের আস্থার সঙ্কট দূর হবে। একইসঙ্গে দেশীয় ও বহুজাতিক মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিকল্প নেই। ভালো কোম্পানি না আসলে পুঁজিবাজার উন্নত ও স্থিতিশীল হবে না। তাই পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়া খুবই জরুরি। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোর ন্যায্য মূল্যসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মতো অন্যান্য দেশীয় ও বহুজাতিক ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
জানা গেছে, ওয়ালটন বাংলাদেশেই উচ্চমানের ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এতে কমেছে আমদানি ব্যয়। ফলে সাশ্রয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। হচ্ছে ব্যাপক কর্মসংস্থান। পাশাপাশি বেড়েছে রপ্তানি আয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সাধারণ জনগণকে ওয়ালটনের এই অগ্রযাত্রার অংশীদার করার উদ্দেশ্য নিয়েই পুঁজিবাজারে আসার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, ওয়ালটন একটি ভালো কোম্পানি। তারা পুঁজিবাজারে লিস্টিং প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে ওয়ালটন শেয়ার বাজারে আসলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে নিতে সক্ষম হবে। এতে দেশীয় ও বহুজাতিক মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। ফলে বিনিয়োগকারীসহ স্টকহোল্ডারদের আস্থার সঙ্কট দূর হবে এবং স্থিতিশীলতা ফিরবে পুঁজিবাজারে।
তিনি বলেন, যে কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে ভালো শেয়ার থাকা দরকার। অন্যথায় সেই শেয়ার বাজার কখনই উন্নতি করতে পারে না। আমাদের স্টক মার্কেটে ভালো শেয়ারের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। তাই, ওয়ালটনের মতো বড় ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর ইস্যু বাজারে আসা দরকার।
ওয়ালটন হাইটেকের প্রসপেক্টাস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩৫২ কোটি টাকা এবং টার্নওভার ছিল ২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওয়ালটনের মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ২৯০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। ওই বছরে ওয়ালটনের টার্নওভার ছিল ৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকার রিফ্রিজারেটর বিক্রি হয়েছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোম্পানিটির টার্নওভার ও মুনাফা বৃদ্ধিতে সাফল্য অর্জনের পেছনে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নতুন সেলস আউটলেট অর্থাৎ প্লাজা চালুর প্রেক্ষিতে বিক্রি ব্যাপক বেড়ে যাওয়া, বিক্রি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পণ্যের একক প্রতি উৎপাদন ব্যয় কমে যাওয়া, সময়োপযোগী বিপণন কৌশল, বিক্রয়োত্তর সেবাকে অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসা; ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে পণ্য ক্রয়ে বাড়তি সুবিধা দেয়া ইত্যাদি।
আরো জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওয়ালটন হাইটেকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন প্লাজার কাছে পণ্য বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৬০২ কোটি টাকার। একই বছরে ওয়ালটন প্লাজার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটির রিসিভাবল অ্যামাউন্ট ছিল ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৪৪০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব পার্থ প্রতীম দাশ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ২০১৮-১৯ বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন প্লাজা চালু করায় আগের অর্থবছরের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই প্লাজার কাছে ওয়ালটনের রিসিভাবল অ্যামাউন্টের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এদিকে নতুন প্লাজা চালুর প্রেক্ষিতে টার্নওভারও বেশ ভালো বেড়েছে। ওয়ালটন প্লাজার কাছে যে পণ্য বিক্রি করা হয় তার আংশিক মাত্র বাকি থাকে। এটি অস্বাভাবিক নয়।
এদিকে ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক সুপরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করে কার্যক্রম পরিচালনা করায় টার্নওভার ও মুনাফা অনেক বেড়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে পাঁচ ধরনের সেলস নেটওয়ার্ক। প্লাজা, পরিবেশক, কর্পোরেট, অনলাইন এবং আন্তর্জাতিক বিপণন। ইতোমধ্যে, ওয়ালটন ফ্রিজের সাশ্রয়ী মূল্য, উচ্চ গুণগতমান, নিঁখুত ফিনিশিং ও বৈচিত্র্যময় অসংখ্য মডেল থাকায় দেশের প্রায় ৭৫ ভাগ ক্রেতার আস্থা জয় করে নিয়েছে। ফলে গত অর্থবছরে ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকার রিফ্রিজারেটর বিক্রির বিশাল মাইলফলক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল ওয়ালটন।
তিনি অরো বলেন, ওয়ালটন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল একটি মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড। দেশের জনগণকে এর অংশীদার বানানোর প্রয়াসে পুঁজিবাজারে আসছে ওয়ালটন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ওয়ালটনের শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত লাভবান হবেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি প্রফিট করবে ওয়ালটন।
প্রসঙ্গত, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি রোড শো করে ওয়ালটন। এরপর গত জানুয়ারি মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সভায় কোম্পানির আইপিও বিডিংয়ের অনুমোদন দেয়। এতে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ওয়ালটনের শেয়ারের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৩১৫ টাকা। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে ট্রিপল এ ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/২০ মার্চ/২০২০