দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দেশজুড়ে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন শুরু করছে। দেশটিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হচ্ছে। সব নাগরিককে দুই সপ্তাহের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ আসছে। এসময় দেশের সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। কেবল খোলা থাকবে জরুরি বিভাগ।

স্টাফোর্ড অ্যাক্ট নামক আইনের আওতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দেশের নাগরিকদের এ নির্দেশ দিতে চলেছেন। সাধারণত দেশে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন।

এ সম্পর্কে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগে কর্মরত একজন শুক্রবার মধ্যরাতে জানান, চলতি সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

যদিও অভিযোগ রয়েছে, তিন মাস আগে সতর্ক করে দেয়ার পরও করোনা ঠেকাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস থেকে শুরু করে অঙ্গরাজ্য ও নগরগুলোতে শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিমুহূর্তে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠেছে। শুক্রবার করোনায় আক্রান্ত মোট ৫৭ জন মারা গেছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর সেখানে এটিই যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। করোনা ঠেকাতে নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়াসহ অনেক অঙ্গরাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন দেশটির ২৩ শতাংশ মানুষ।

নিউইয়র্কে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই নিউইয়র্কে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে জানানো হচ্ছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর কর্মকর্তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত নিউইয়র্ক পুলিশের ৫২ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে প্রথম দিকে তেমন প্রভাব পড়েনি। বর্তমানে দেশটির সব কটি অঙ্গরাজ্যে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য থেকে শুরু হওয়া করোনা এখন সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে নিউইয়র্ক শহরে।

চীন থেকে করোনাভাইরাস যখন ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটিতে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়ারও তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু ট্রাম্প ওই সতর্কবার্তাকে পাত্তা দেননি এবং কোনো পদক্ষেপেই নেননি।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের উপদেষ্টারাও করোনাভাইরাস নিয়ে বারবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। শেষে ২৭ জানুয়ারি ট্রাম্প এই ভাইরাস নিয়ে প্রথমবারের মতো নড়েচড়ে বসেন। ওয়াশিংটন পোস্ট ২০ মার্চ এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে, ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত ও আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি মিনিটে বাড়ছে। নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অঙ্গরাজ্যগুলো লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। নিউইয়র্ক, পার্শ্ববর্তী নিউজার্সি, কানেটিকাট ও ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যেও লকডাউন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বলছে, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে যেকোনো সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন করার নির্দেশ দিতে পারেন।

ওয়াশিংটনে আইনপ্রণেতারা জনসাধারণের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে একমত হওয়ার চেষ্টা করছেন। একাধিক আইনপ্রণেতা আভাস দিয়েছেন, শুক্রবার মধ্যরাতের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদানের কিস্তি ও পরিমাণ নিয়ে আইনপ্রণেতাদের ঐকমত্য না হলেও সোমবারের মধ্যে এ নিয়ে সমঝোতা চূড়ান্ত হবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২১মার্চ,২০২০)