আন্দোলনে দেখা ছিল না, মুক্তির দিন নেতাকর্মীদের হাঙ্গামা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া ৭৭৬ দিন কারারুদ্ধ থাকলেও বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে রাজপথে তেমন কোন আন্দোলন-সংগ্রাম করতে দেখা যায়নি। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা অমান্য করেই বেগম জিয়ার মুক্তির দিনে নেতাকর্মীদের হাঙ্গামা করতে দেখা গেছে। এদিন বিএসএমএমইউতে জমায়েত, স্লোগান এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি বহরের সঙ্গে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীদেরকে মিছিল সহকারে যেতে দেখা যায়।
এসময় উপস্থিত অনেককেই বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য বলতে দেখা গেছে যে, প্রায় দীর্ঘ ২৫ মাস ধরে আপনাদের নেত্রী কারাগারে আছেন, কিন্তু আপনারা আন্দোলন করে তাকে মুক্ত করতে পারেন নাই। আর আজ করোনা সংক্রমণের পরও আপনারা এখানে এসেছেন? আপনারা কি আপনাদের নেত্রীকে মেরে ফেলতে চান?
সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ তথ্য শোনার পর গতকালই বিএসএমএমইউ হাসপাতালে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীরা জমায়েত হন। আর আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে বিএসএমএমইউতে জমায়েত হতে দেখা গেছে। প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীরা বিএসএমএমইউ হাসপাতালে জমায়েত হন। আর বেগম জিয়ার গাড়ি বহর হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় গেটের বাইরে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।
বুধবার বিকেল সোয়া ৪টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল থেকে ছাড়া পান খালেদা জিয়া। এর আগে সোয়া ২টায় দিকে কারা কর্তৃপক্ষ মুক্তির ছাড়পত্র নিয়ে বিএসএমএমইউতে আসেন।
পরে খালেদা জিয়াকে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিনা ইসলাম ও ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান আনতে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে তাদের গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে ঢোকার পরই শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হন। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে গোলাপি রঙের শাড়ি পরিহিত বিএনপি চেয়ারপারসন বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লক থেকে বের হন। চোখে ছিল রোদচশমা। তিনি বেরিয়ে আসার পরপরই হাসপাতালের ভেতরেই তার গাড়িকে কেন্দ্র করে নেতা–কর্মীদের ভিড় জমে।
এর আগে দুপুরে আড়াইটার দিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী-খান সোহেল বিএসএমএমইউ’র ভিতর থেকে বের হয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা সবাই চলে যান, আপানাদের জন্য ম্যাডাম বের হচ্ছেন না। আপনারা চলে গেলেই ম্যাডাম বের হবেন। একাধিকবার সোহেল এসব কথা বললেও নেতাকর্মীরা তার কথা কর্ণপাত না করে যে যায় জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে সোহেল বাধ্য হয়ে নেতাকর্মীদের ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়ে হাসপাতালের ভিতরে চলে যান।
কিছুক্ষণ পরে সোহেল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে বাইরে আসেন। এসময় মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা দূরে সরে যান। না হলে ম্যাডাম বের হবেন না। ফখরুলের কথাও কর্ণপাত না করায় তিনি পরবর্তীতে নেতাকর্মীদের ধমক দিয়ে দূরে সরিয়ে দেন।
তিনি বলেন, তোমরা কথা না শুনলে আমি সবাই বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পরে নেতাকর্মীরা কিছুটা দূরে সরে গেলেও মির্জা ফখরুল ভিতরে চলে গেলে আবারও সবাই গাড়ির সামনে জমায়েত হন।
এদিকে গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতি বলা হয়, এই মর্মে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রদান করা যাচ্ছে যে, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যেন বিএসএমএমইউ (পিজি) হাসপাতালের সামনে ও গেটের ভেতরে জমায়েত না হন, এই জমায়েতের কারণে চলমান করোনাভাইরাস মহামারির ভয়াবহ বিপর্যয়ের সময়ে বেগম খালেদা জিয়াসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা এবং জমায়েত হওয়া দলীয় নেতাকর্মীরা উচ্চ ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই সকল নেতাকর্মীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনা এবং করোনাভাইরাসের মরণছোবল থেকে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীকে রক্ষার করতে মহান রাব্বুল আলামীন এর নিকট দোয়া করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
সরকার ও বিএনপির নির্দেশনা অমান্য করে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউ থেকে বের হওয়ার পর বেশ কিছু কর্মী গাড়ি-মোটরসাইকেল এবং শতাধিক নেতা-কর্মী পায়ে হেঁটে তার গাড়িবহরের সাথে এগোতে থাকেন। এদের কারও কারও হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। এসব কারণে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি ধীরগতিতে এগোতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের লাঠিপেটা শুরু করে।
অন্যদিকে দলটি গত ২৫ মাসে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শুধু মাত্র বিভাগীয় সমাবেশ, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, জনসভা, আলোচনা সভা এবং প্রতিবাদ মিছিলও করছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসনের দণ্ড স্থগিত করে তাকে শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শর্তগুলো হল- এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি হন খালেদা জিয়া। প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। অথ্যাৎ প্রায় ১১ মাস ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৫মার্চ,২০২০)