জেলা টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ৫০ বছর বয়সী গর্ভধারিনী মাকে টাঙ্গাইলের সখীপুরে শাল-গজারির বনে ফেলে যান তার সন্তানেরা। যাওয়ার সময় বলে যান, মা তুমি এই বনে একটি রাত থাকো, কাল এসে তোমাকে আবার নিয়ে যাব।

এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মাকে বনে ফেলে যাওয়ার পর বনের ভেতর থেকে ওই নারীর কান্নার শব্দ শোনে স্থানীয়রা ইউএনওকে খবর দেয়। পরবর্তীতে রাত দেড়টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমাউল হুসনা লিজার নেতৃত্বে ওই নারীকে উদ্ধার করে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ওই হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ওই নারীকে ভর্তি না করলে মঙ্গলবার সকাল ৭ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

তথ্য মতে, ওই নারীর বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায়। গাজীপুরের সালনায় একটি পোশাক কারখানায় ওই নারীর এক ছেলে, ২ মেয়ে ও জামাতারা চাকরি করেন। সবাই মিলে সালনায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ওই নারী সবাইকে রান্না করে খাওয়াতেন। কয়েক দিন ধরে ওই নারীর জ্বর, সর্দি, কাশি শুরু হলে আশপাশের বাসার লোকজন তাদের তাড়িয়ে দেন। একটি পিকআপভ্যান ভাড়া করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী যাওয়ার পথে সখীপুরের জঙ্গলে সন্তানেরা মাকে ফেলে যান।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহীনুর আলম বলেন, ওই নারীর শরীরে জ্বর, গলাব্যাথা, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে। করোনার উপসর্গ থাকায় ওই নারীকে রাতেই কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসাদের সঙ্গে কথা বলে পাঠানো হয়। পরে ভোর ৫ টায় ওই হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না হওয়ায় সকাল ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। কাল বুধবার ফলাফল জানা যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, করোনার লক্ষণ থাকায় ওই মহিলার এক ছেলে ও দুই মেয়ে ও মেয়ের জামাই তারা মিলে তাদের মাকে ওই বনে ফেলে দিয়ে তারা গ্রামে চলে যায়। তারা তার গর্ভধারিনী মাকে একা একটি গভীর জঙ্গলে ফেল গেল? কী অমানবিক আচরণ করল তার সন্তানেরা। জীবিত অবস্থায় তারা তার মাকে ফেলে গেল। গ্রামবাসী খোঁজ না পেলে রাতের বেলা হয়তো ওই অসুস্থ নারীকে শেয়াল কুকুরে খেয়ে ফেলত। ইউএনও ওই নারীর ছেলে মেয়ের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে এসব উক্তি তার ফেসবুকে প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, ওই নারীকে উদ্ধারে সখিপুর থানার ওসি ও একদল পুলিশ, হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহীনুর আলমসহ চিকিৎসা দল, গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মিঞাসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বাররা আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৪এপ্রিল,২০২০)